১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪
প্রশাসনের অন্যায় ১৪৪ ধারা লংঘন করে পিসিপি খাগড়াছড়িতে সফলভাবে সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে পিসিপি এক সাহসিকা ও বীরত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১২-১৩ এপ্রিল ১৯৯৪
পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের ওপর সরকার ও সেনাবাহিনীর অব্যাহত দমন পীড়নের প্রতিবাদে বৈসাবি উৎসব বর্জনের ডাক দেয়া হয়। সেনাবাহিনী জোর জবরদস্তি করে উৎসব করানোর বার্থ অপচেষ্টা চালায়। বান্দরবানে জোর করে উৎসব করানোর জন্য কতিপয় দালালকে জেলা পরিষন, ব্রিগেড অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট থেকে হাজার হাজার টাকা বিলিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও পিসিপি’র আহবানে সাড়া নিয়ে জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে বৈসাবি উৎসব বর্জন করেন।
১২ জুন ১৯৯৪
চট্টগ্রামে সংগঠনের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী এতে অংশগ্রহণ করেন। দেশের স্বনামধন্য কবি শামসুর রাহমান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সংগঠনের কৌশলগত কারণে ২০শে মে পরিবর্তে ১২ জুন পিসিপি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়।।
১৩-১৫ জুন ১৯৯৪
চট্টগ্রামে ৪র্থ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত গঠনতন্ত্র উত্থাপিত হয় এবং তা অনুমোদিত হয়। দলীয় পতাকার ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়। পিসিপি কাঠামোতে পরিবর্তন আসে। ২৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে কেএসমং ও সঞ্চয় চাকমা। প্রসিত খীসা নতুন কমিটির কাছে দায়িত্বভার অর্পন করে ছাত্র রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
১৭ অক্টোবর ১৯৯
দিঘীনালায় পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রথম শহীদ ভরদাস মুনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষে সকালে শোক র্যালী অনুষ্ঠিত হয় ও শহীদের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়। বিকেলে ভরদাস মুনির স্মরণে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি বিমল বিশ্বাস, প্রসিত বি. খীসা, জাসদের আবু সাইদ খান, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আহাদ আহমেদ, ছাত্র লীগ (বাকা) এর সাজ্জাদ, শাহজাহান আলম, ছাত্র লীগের সহসভাপতি মোঃ মোহসিন, পাহাড়ী গণ পরিষদের সৌখিন চাকমা।
৩০ অক্টোবর ১৯৯৪
খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। ১৯৯০ সালের এ দিনে পুলিশ খাগড়াছড়িতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর হামলা চালিয়ে ৫০ জনের অধিক নেতা কর্মিকে মারাত্মকভাবে আহত করেছিল। ১০ জনকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে তোলে আটকে রাখে। পুলিশের বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে পরে ছাত্ররা ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এজন্য এ দিনটিকে অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৭ নভেম্বর ১৯৪
নানিয়াচরে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে নানিয়াচর গণহত্যা নিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে শোক র্যালি, স্মৃতিস্তম্ভ পুষ্পমাল্য অর্পন, শোক সমাবেশ ও অস্থায়ী স্মৃতি উম্মোচন করা হয়। সংগঠনের তৎকালী সতাপতি কেএসমং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মাহবুব) নেতা আ.ফ.ম. মাহবুবুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের নেতা ফয়জুল হাকিম লালা, পিসিপি’র প্রাক্তন সভাপতি (বর্তমানে ইউপিডিএফ-এর সভাপতি) প্রসিত খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র লীগ (বাকা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান, বাংলাদেশ ছাত্র লীগ (শাপা) কেন্দ্রীয় নেতা পাংকজ দেব নাথ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা জয়জিৎ বড়ুয়া, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নানিয়াচর থানা শাখার সভাপতি প্রীতি কুমার চাকমা, সজীব চাকমা।
১৯ নভেম্বর ১৯৯৪
বাঘাইছড়ি থানা শাখার সম্মেলন উপলক্ষে এক বিশাল ছত্র গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । হাজার হাজার আবল-বৃদ্ধ-বণিতা অংশগ্রহণ করে। পিসিপি ও পিজিপি’র উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ১ ডিসেম্বর ১৯৯৪ পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখা টিএসসি মিলনায়তনে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ডঃ এমাজ উদ্দীন আহমেদ। তিনি পুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়ীদের নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত হতে হয়। তিনি বলেন জাতিসত্তার স্বীকৃতি দেয়া অসম্ভব কিছু নয়। পাহাড়ীদেরকে উপজাতি হিসেবে রেখে জাতিসত্তার সমুন্নত রাখা সম্ভব নয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার সংখ্যা বাড়ানোর আশ্বাস দেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মানিক লাল দেওয়ান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফসার আহমেদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি (বর্তমানে ইউপিডিএফ-এর আহ্বায়ক) প্রসিত খীসা, কেএস মং মারমা ও সঞ্চয় চাকমা ।।
৯ জানুয়ারি ১৯৯৫
গণধিকৃত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকায় এক বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি স দ্বীপ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গণসংযোগ সম্পাদক ভূবন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দীপ্তি শংকর চাকমা, সঞ্চয় চাকমা ও কেএসমং মারমা
১৫ জানুয়ারি ১৯৯৫
বর্মাছড়ি ও ফটিকছড়ি শাখার যৌথ উদ্যোগে নতুন বাজার মাঠে এক বিশাল ছাত্র গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনিল চাকমা এতে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন ফটিকছড়ি শাখার সভাপতি রণজিৎ চাকমা, কাউখালী থানা শাখার সভাপতি সোহেল চৌধুরী, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জলি মং মারমা, কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক নিকোলাস চাকমা ও কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক দীপ্তি শংকর চাকমা প্রমুখ বক্তারা অবিলম্বে গণধিকৃত জেলা পরিষদ বাতিল করে জুম্ম জনগণের প্রাণের দাবি স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের দাবি জানান।
২৫ জানুয়ারি ১৯৯৫
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে নান্যাচর থানা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক কালায়ন চাকমা ও কাউখালী থানা শাখার হিরণ চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি ও খাগড়াছড়িতে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাসহ সকল প্রকার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
২২ জানুয়ারি ১৯৯৫
পাহাড়ী ছাত্র পরিদন, পাহাড়ী গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় নূর হোসেন স্কোয়ারে এক মহাসমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র তৎকালীন সভাপতি কেএস মং মারমা । বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা নিম চন্দ্র ভৌমিক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট নেতা বদরুদ্দীন উমর, ওয়াকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য শাহ আলম, পিসিপি’র প্রাক্তন সভাপতি (বর্তমানে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক) প্রসিত খীসা সহ আরো অনেকে।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫
কুতুকছড়ি শাখার সম্মেলন কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ী ছাত্র পরিমানেনা কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি প্রতীক দেওয়ান সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন মিলন চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নানিয়াচর থানা শাখার সভাপতি জ্যোতি লাল চাকমা, রাঙামাটি কলেজ শাখার সভাপতি সরিৎ চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপন খীসা, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক দীপ্তি শংকর চাকমা, সাধারণ সম্পাদক সাঞ্চয় চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সহ সভানেত্রী কবিতা চাকমা। বক্তব্য শেষে অভিলাষ চাকমাকে সভাপতি ও বিনয়কৃষ্ণ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
১৫ মার্চ ১৯৯৫
বান্দরবান জেলা শাখার সম্মেলন বানচালের উদ্দেশ্যে মিছিলের উপর পুলিশ ও বহিরাগতরা হামলা চালায়। পিসিপি বহু আগে থেকেই উক্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু হঠাৎ ১৩ মার্চ কুখ্যাত দালাল সাচিংপ্রু জেরীর বাসভবনে মিটিং করে কতিপয় দাগি মাস্তান ও বিএনপি’র নেতা কর্মি “বান্দরবানের শান্তিপ্রিয় জনগণ” নামে একটি ভূঁইফোর সংগঠনের জন্ম দেয়। ১৫ মার্চ ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও এরা মিছিল করে পাহাড়ী বিদ্বেষী ও উস্কানিমূলক শ্লোগান দেয়। পিসিপি বাধ্য হয় ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল বের করতে। পিসিপি’র সম্মেলন কারোর বিরুদ্ধে নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। এতৎসত্ত্বেও দুর্বত্তরা পুলিশের সহায়তায় মারমা অধ্যুষিত উজানী পাড়া মধ্যম পাড়ায় হামলা চালায়। তারা লুটপাট ও বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ হামলায় রিজন চাকমাসহ পিসিপি’র ৭ জন নেতাকর্মি মারাত্মকভাবে আহত হয়। পুলিশ উল্টো পিসিপি’র ৩১ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ও ২২ জনকে গ্রেফতার করে। দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ এর প্রতিবাদ জানায়। সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৭ মার্চ ঢাকা থেকে মানবাধিকার কর্মি, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা জেলা প্রশাসক, জেল কর্তৃপক্ষ, ধর্মীয় পুরোহিত, পুলিশ অফিসার, ঘটনার শিকার ব্যক্তিসহ অন্যান্য আরো বহু লোকের সাথে কথা বলেন। তদন্ত টিমটি ১৮ মার্চ ঢাকায় ফিরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তারা ১৫ মার্চের ঘটনার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরকে দায়ি করেন।
২৩ মার্চ ১৯৯৫
বান্দরবানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ২২ জন ছাত্রনেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকায় এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপি পেশ করা
১৫ জুন ১৯৯৫
সরকারের সাথে গোপন বোঝাপড়া হলে ধুধুকছড়ায় এক প্রকাশ্য জনাসমাবেশে জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পিসিপি-পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ’ এর সংগ্রামী ধারায় পরিচালিত আন্দোলন সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে বক্তব্য রাখেন। তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় । সমাবেশে উপস্থিত ছাত্র-যুবকরা ঐ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে “কিভাবে অধিকার আদায় হয় সে ব্যাপারে সরাসরি সন্তু লারমার কাছ থেকে জানতে চান। উপস্থিত ছাত্র-যুবকদের প্রশ্নের সঠিক জবার দিতে ব্যর্থ হন তিনি । এতে সমাবেশে উপস্থিত লোকজনদের মধ্যে যথেষ্ট গুস্তান সৃষ্টি হয়। এবং সমাবেশ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে অনেকে সভা শেষ না হতেই উঠে যান । ছাত্র-যুবকদের প্রশ্নের জবাব পরে দেবেন আশ্বাস দিয়ে সন্তু লারমা সভা অসমাপ্ত অবস্থায় চলে যান। এ ঘটনায় সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন প্রদীপ লাল চাকমা, সে সময় পিজিপি পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি। তিনি দাঁড়িয়ে প্রথম প্রশ্ন করেন। সভা ভুন্ডুল হলে শুধুক ছাড়া চায়ের দোকানে বসে প্রদীপ লাল চাকমা এর মন্তব্য করেন যে, ‘এরা (জেএসএস নেতৃত্ব) আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিকি ভাগও হতে পারবে না। আমাদের মতো থানা শাখার নেতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। আর আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলোচনায় তারা কিভাবে পারবে?” বলা বাহুল্য পরই প্রদীপ লাল চাকমা সম্ব পারমা চরের নেক নজরে পড়ে যান। তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালান। পিজিপি হতে পদত্যাগে বাধ্য করেন। তাতেও তাদের ভয় কাটেনি। ‘৯৮ সালের এপ্রিল সন্ত্রাসী চক্র নিয়ে প্রদীপ লাল চাকমার প্রাণ নাশ করেন।
১৮ জুন ১৯৯৫
খাগড়াছড়িতে তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পিসিপি -পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ এর নেতা-কর্মিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যামাম প্রশাসনের অব্যাহত নিপীড়নের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ কর্মসূচী সফলভাবে গাণিত হয়। এতে জিরো মাইল ঠাকুবছড়া এলাকাবাসী সর্বাত্মকভাবে কর্মসূচী সফল করতে ভূমিকা রাখেন। অবরোধ চলাকালে পুলিশ পাড়ায় ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে মারমা মেয়েরা সাহসিকতার সাথে তাদের প্রতিরোধ করেন। ফিল্ডে পুরো কর্মসূচী সমন্বয় ও নির্দেশনা দিতে সরাসরি মাঠে নামেন পাহাড়ি গণপরিষদের নেতা ববি শংকর চাকমা।
১৩ অক্টোবর ১৯৯৫
মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দিঘীনালায় ভরদাস মুনির ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকালে শোক বাণীতে শত পাহাড়ী ছাত্র জনতা অংশগ্রহণ করেন। শহীদের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়।
৩১ অক্টোবর ১৯৯৫
পিসিপি পানছড়ি থানা শাখার ৩য় বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষে বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল ছাত্র গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কালাচাঁদ চাকমা এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে দেবোত্তম চাকমা, পূর্ণ বরণ ডাকমা ও শ্যামল মিত্র চাকমাকে যথাক্রমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠিত
১০ নভেম্বর ১৯৯
মানবেন্দ্র লারমার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি এ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর উদ্যোক্তা। পাহাড়ী গণ পরিষদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রসিত খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সালিম সামাদ, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ইমতিয়াজ আহমদ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ডঃ রঙ্গলাল সেন, বাসদ শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আব্দুল্লাহ সরকার ও বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
১৭ নভেম্বর ১৯৯৫
পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে মানিয়াচর গণহত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকী পালিত হয়। রাঙ্গামাটিতে মৃগাঙ্গ খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সুনীল কান্তি সে, সমীরণ চাকমা, সঞ্চয় চাকমা, সচিব চাকমা, দীপন সীসা, নৈরঞ্জনা চাকমা ও আনন্দ প্রকাশ চাকমা। বক্তাগণ সরকার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
৭ মার্চ ১৯৯৬
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর সৃষ্ট মুখোশ বাহিনীকে (আসল নাম “পিজিপি- পিসিপি সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি”) প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অমর বিকাশ চাকমা শহীদ হন। মুখোশ বাহিনীর সদস্যরা রাতের বেলা পেরাছড়ায় বিম্বিসার খীসার বাড়িতে হানা দিতে গেলে প্রতিবেশীরা মুখোশ, মুখোশ” বলে চিৎকার করলে এলাকার লোকজন তাদের প্রতিরোধ করতে পাঠিসোটা নিয়ে এগিয়ে আসে। ক্রমে ধ্বংপুজা ও নারাঙহিয়ার লোকজনও বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে এসে এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধে সামিল হয়। লোকজন তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে আর্মিরা ব্রাশ ফায়ার করে ও সন্ত্রাসী মুখোশরা ককটেল ফাটায়। গ্রামবাসীরা এর পাল্টা জবাবে “ধর ধর” বলে
চিৎকার করে এগিয়ে গেলে সেনাবাহিনী মুখোশ সন্ত্রাসীদের পিক আপে ভুলে পালিয়ে যায়। এর পর কয়েক শ পুলিশ এসে নাৱাহিয়া ও স্বনির্ভর • এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্ব স্ব বাড়িতে ফিরতে থাকা জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অমর বিকাশ চাকমা (২৭) নিহত ও আরো অর্ধ শতাধিক আহত হন। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার এক প্রেস ব্রিফিং -এ দেড় শ রাউন্ড গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেন।
৩১ মার্চ ১৯৯৬
তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের আরো অনেক সহযোদ্ধার সাথে ক্যাজাই মারমাও সড়ক অবরোধ কর্মসূচী প্রচার করতে যায়। চাখোয়াইপ্রু মারমার মুক্তির দাবিতে ছিল এই কর্মসূচী। তাদের প্রচার কার্যের মাঝপথে বাধা দেয় পানখিয়া পাড়া স্কুলের নিকটস্থ এপি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে কোনরূপ তোয়াক্কা না করে সৈন্যরা তাদেরকে মারতে উদ্যত হয়। নাগরিক অধিকার মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের কথা যুক্তির সাথে তুলে ধরতে গেলে এপি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ‘ আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়। যুক্তি তর্কে কুলে উঠতে না পেরে এক পর্যায়ে তারা অস্ত্র দিয়ে জবাব দেয়। হাতের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্রাশ ফায়ারে ক্যাজাই মারমার বুক ঝাঝরা করে দেয়।
২ এপ্রিল ১৯৯৬
রাজস্থলী থানা শাখার সম্মেলন বাঙ্গাল হালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বিডিআর ও সেনাবাহিনী কর্তৃক বাধা প্রদান সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র জনতা স্বতস্ফূর্তভাবে এতে অংশগ্রহণ করে।
১০ এপ্রিল ১৯৯৬
পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে জনগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ কক্ষে লোগাং ইত্যাযজ্ঞের স্মরণে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিত খীসা এতে সভাপতিত্ব করেন।
১৫ এপ্রিল ১৯৯৬
“পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের সংস্কৃতি ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন” শীর্ষক এক আলোচনা সভা রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হয়। বৈসাবি উদ্যাপন কমিটি ৯৬ এর আয়োজন করে। পাহাড়ী গণ পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বিজয় কেতন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর ডঃ মানিক লাল দেওয়ান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ শিক্ষাবিন যামিনী রঞ্জন চাকমা। আলোচনা শেষে নিউ হিল শিল্পী গোষ্ঠি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১৮ এপ্রিল ১৯৯৬
পিসিপি ঢাকা শাখার উদ্যোগে জগন্নাথ হল মাঠ গ্যালারীতে শহীদ নীতিশ চাকমার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভার আয়োজন করে। মহালছড়িতে নীতিশ চাকমার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়।
২৭ জুন ১৯৯৬
বাঘাইছড়িতে কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদ করতে গেলে জনৈক অনুপ্রবেশকারী পুলিশের কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে জনতার ওপর গুলি চালালে স্কুল ছাত্র রূপন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। একই দিন অন্য এক ঘটনায় বহিরাগতরা মনোতোষ, সমর বিজয় ও সুকেশ চাকমাকে গুম করে। তারা পিকেটিং-এ অংশ নেয়ার জন্য রূপকারী থেকে মারিশ্যা বাজারে আসছিল। তাদেরকে মুসলিম ব্লক নামক স্থানে বহিরাগতরা আটকায়। সেই পর থেকে তাদের খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হয় তারা তাদেরকে গুম করে ফেলেছে।
৭ ডিসেম্বর ১৯৯৬
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৬ষ্ঠ কাউন্সিল ও সম্মেলন চট্টগ্রাম শহরের ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নব নিযুক্ত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান দীপ্তি শংকর চাকমা ।
২১ ডিসেম্বর ১৯৯৬
বান্দরবান জেলা শাখার ২য় সম্মেলন ও কাউন্সিল টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। ক্যবামং মারমা এতে সভাপতিত্ব করেন। কারা মারমাকে সভাপতি, মোয়াইয়াহ প্রু মারমাকে সাধারণ সম্পাদক সুফল চাকমাকে যোগাযোগ ও সংগঠন বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়।
৪ জানুয়ারী ১৯৯৭
ঘিলাছড়ি ইউপি শাখার তৃতীয় বার্ষিক কাউন্সিল ঘিলাছড়ি বাজার মাঠে সম্পন্ন হয়। সভাপতিত্ব করেন জ্ঞান রঞ্জন চাকমা। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মতি বিকাশ চাকমাকে সভাপতি, মান নিকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও পলাশ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
১১ জানুয়ারি ১৯৯৭
মেরুং ইউনিয়নের লাম্বাছড়া গ্রামে ছাত্রনেতা প্রদীপ চাকমার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রনেতা অনিমেষ চাকমা, নিকোলাস চাকমা, দীঘিনালা থানা শাখার ধর্মজ্যোতি চাকমা ও সিন্ধু বিকাশ চাকমা। পরে সুজয় চাকমাকে সভাপতি ও দেবস্মৃতি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
৩০ জানুয়ারী ১৯৯৭
অনিল চাকমাকে গ্রেফতার ও অব্যাহত সেনা নির্যাতনের প্রতিবাদে পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষন ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
২ মার্চ ১৯৯৭
সুবলং শাখার ৪র্থ বার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি বিরাজময় চাকমা। বিধান চাকমাকে সভাপত্তি, নিরুপম চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও ডাইনিয়েন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদ নির্বাচিত করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
৩ মার্চ ১৯৯৭
বন্দুক ভাঙা শাখা কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রীতিময় চাকমা সভাপতিত্ব করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী গণ পরিষদ বন্দুক কান্তা শাখার পক্ষ থেকে রাহুল চাকমা। সর্বসম্মতিক্রমে উৎপল চাকমাকে সভাপতি ও সুভাস বসু চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়।
৭ মার্চ ১৯৯৭
রুমা থানা শাখার ২য় বার্ষিক কাউন্সিল রুমা বাজার মাঠে সম্পন্ন হয়। এ উপলক্ষে একটি বিশাল র্যালি রূমা থানা প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন অংদোয়াই চিং মারমা। তিনি পিসিপি’র উক্ত শাখার সভাপতি। সভা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে আবারো তাকে সভাপতি পুনঃ নির্বাচিত করা হয়। এছাড়া ভানমুন সিরাম বমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। নতুন কমিটি ১১ সদস্য বিশিষ্ট ।
১০ মার্চ ১৯৯৭
সর্ব প্রথম পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে ঢাকার রাজপথে পাহাড়ী পদ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মিছিল করে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রসিত খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রবি শংকর চাকমা, সঞ্চয় চাকমা, কবিতা চাকমা ও মংসানু মারমা।
১৫ মার্চ ১৯৯৭
বালাঘাটা আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় -ও জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চক্র পাড়া আঞ্চলিক শাখার কাউলি অনুষ্ঠিত হয়। চন্দ্রমোহন চাকমাকে সভাপতি ও রজত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
৪ এপ্রিল ১৯৯৭
বসন্ত পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে বালুখালি ইউপি শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। সভাপতিত্ব করেন রূপময় চাকনা। মঙ্গল চাকমাকে সভাপতি ও বরুণ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে নতুন কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
১২ এপ্রিল ১৯৯৭
বৈসাবি উৎসবের ফুল বিজুর দিনে জৈনিক পকেট মারের গণ পিটুনির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাইসছড়ি বাজারে দাঙ্গা বাঁধানো হয়। ঐ পকেট মার জনৈক পাহাড়ীর পকেট কাটতে গেলে হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং পাহাড়ী বাঙালী নির্বিশেষে তাকে গণ ধোলাই দেয়। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘটনাকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা চালঅয়। সেনাবাহিনী বাজারে আসা লোকজনকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। ষড়যন্ত্রকারীরা হঠাৎ পরিকল্পিতভাবে মাইসছড়ি স্কুলের কাছে এক পাহাড়ী মেয়েকে মারধর করে। এ সংবাদ বাজারে পৌঁছার সাথে সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । অনেকে তাড়াতাড়ি বাজার ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুতি নেয়। এমন সময় মাইসছড়ি বাজারের কতিপয় দোকানদার ও বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা দা, কুড়াল, লাঠিসোটা নিয়ে পাহাড়ীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে বহু লোক আহত হয়। পাহাড়ীদের মালামাল লুট করা হয়। এর প্রতিবাদে পাহাড়ীরা দীর্ঘদিন ধরে মাইসছড়ি বাজার বর্জন করে।
২৪ এপ্রিল ১৯৯৭
মাইসছড়ি পুরাতন বাজার মাঠে তিন সংগঠনের উদ্দ্যোগে এক বিশাল ছাত্র গণ জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ী গণ পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কিরণ মারমা সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন দীপ্তি শংকর চাকমা, কাজরী মারমা, প্রদীপন খীসা ও ঝিনু চাকমা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মাইসছড়ি ঘটনার পর সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তারা সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত দাঙ্গা প্রতিহত করার জন্য এলাকাবাসীকে ধন্যাবাদ জানান।
২০ মে ১৯৯৭
ডলু পাড়া আঞ্চলিক শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। ডলুপাড়া বৌদ্ধ বিহারে। ক্যাচিং অং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্যজরী মারমা। ক্যাচিং মারমাকে সভাপতি ও পুশৈথোয়াই মারমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
২১ মে ১৯৯৭
ফটিকছড়ি শাখার ২য় বার্ষিক কাউন্সিল ফটিকছড়ি নতুন বাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ী কমিটির সহ সভাপতি তপন চাকমা সভাপতিত্ব করেন। পরে আশুতোষ চাকমাকে সভাপতি করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা।
২৫ মে ১৯৯৭
পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তেল-গ্যাস সংক্রান্ত চুকি বাতিল ও অনুসন্ধান উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজ করে। নেতৃবৃন্দ বলেন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড মেরিডিয়ান ইন্টারন্যাশন্যাল লিঃ সহ বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে পার্বত্য চট্টগ্রামের খনিজ সম্পদ লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিয়েছে।
– ২৮ মে ১৯৯৭
মাইল্যা ও সার্বোতনী হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে খোরমারা হাইস্কুল মাঠে বিশাল গণ সমাবেশ ও ধর্মীয় বিধান মতে অন্ত্যেক্রিয়া সম্পন্ন হয়। খেদারমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুচিত্র কুমার চাকমা এতে সভাপতিত্ব
৩০ মে ১৯৯৭
বড়াদাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড়াদাম ইউপি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন খুকু মনি চাকমা। কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চাকমাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা পূর্ণস্বায়ত্ত্বশাসন দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন এবং এ দাবি সময়োচিত বা নত করেন। পরে জনপ্রিয় চাকমাকে সভাপতি ও জ্ঞান রঞ্জন চাকমাকে সাধ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
৫ আগষ্ট ১৯৯৭
খাগড়াছড়ি থেকে ফেরার পথে লতিবান নামক স্থান থেকে কিবা উদর চাকমার নেতৃত্বে কতিপয় দুর্বর অনিমেষ চাকমা রিংকু ও কুসুম প্রিয় চাকমাকে অপহরণ করে। পরদিন রাতে পূর্ব তাদেরকে নিয়ে পাখায়না থেকে দুধুকছড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে জগদীশ চেয়ারম্যান পাড়া অতিক্রম করার সময় কুসুম প্রিয় কোনভাবে শিকলের বাঁধন খুলে পালিয়ে যায় এবং রিংকুদেরকে দুর্বত্তরা অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে বলে চিৎকার করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে এলাকার লোকজন চারদিক থেকে অপহরণকারী দুর্বত্তদেরকে ঘিরে ফেলে এবং ছয় জনকে আটক করে। জনতা দুর্বত্তাদের মূল হোতা কিরণ উদয় চাকমা ও অন্য কয়েকজনকে গণধোলাই দেয়।