২০ মে ১৯৮৯
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ গঠন ।
২১ মে ১৯৮৯
ঢাকার রাজপথে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে প্রথম মৌন মিছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শত শত জুম্ম ছাত্র ছাত্রী এই ঐতিহাসিক মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন ।
৯ জুলাই ১৯৯১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কয়েকশত পাহাড়ি ছাত্রছাত্রী এতে অংশগ্রহণ করেন । বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংহতি বক্তব্য রাখেন।
১৪ জুলাই ১৯৯১
বিজয়কেতন চাকমা ও মনোতোষ দেওয়ানের মুক্তির দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পাহাড়ি গণ পরিষদ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সুবোধ বিকাশ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো ও বাসদ নেতা আবদুল্লাহ সরকারসহ আরো অনেকে । পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এই সমাবেশ সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২
মাননীয় স্পীকারের নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এর আগে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র নেতৃবৃন্দ সংহতি বক্তব্য রাখেন । সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি পেশ করার উদ্দেশ্যে একটি মিছিল জাতীয় সংসদ ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হয় । মিছিলটি পুলিশ বাংলা মোটরে আটকায়। সেখানে পিসিপি’র তৎকালীন সভাপতি প্রসিত খীসা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। পরে সেখান থেকে তার নেতৃত্বে ছাত্র নেতৃবৃন্দের একটি টিম স্মারকলিপি হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে স্পীকারের কাছে যায়। প্রায় ছয় শত পাহাড়ী ছাত্র ছাত্রী এই মিছিলে অংশগ্রহণ করে।
১৩ এপ্রিল ১৯৯২
১০ এপ্রিল লোগাং গণহত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বকালের সবচেয়ে বিশাল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বণিতা অংশগ্রহণ করেন। জুম্ম চাকুরিজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস আদালত বর্জন করে প্রতিবাদী জনতার কাতারে সামিল হন । ঢাকা থেকে পিসিপি কর্তৃক আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মি ও লেখক বুদ্ধিজীবীর টিমটিও শোকাহত জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
২৮ এপ্রিল ১৯৯২
পিসিপি’র উদ্যোগে লোগাং পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন । লোগাং পোড়াভিটায় গিয়ে শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করা হয় । ধর্মীয় বিধান মতে শহীদদের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান করা হয়। সেখানে ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরাও এই পদযাত্রায় অংশ নেন ।
২০ মে ১৯৯২
পিসিপি’র ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটির শিল্পকলা একাডেমীর প্রাঙ্গনে তৎকালীন সভাপতি প্রসিত বি,খীসার সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত রাজনৈতিক সমাধান স্বায়ত্তশাসনের ডাক দেয়া হয় । সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ নামধারী সন্ত্রাসীরা অনুষ্ঠানে হামলা চালায় ।
১২-১৪ জুন ১৯৯২
পিসিপি’র ১ম প্রতিনিধি সম্মেলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব শান্তি প্যাগোডায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বিপুল ভোটে স্বায়ত্তশাসন দাবি অনুমোদিত হয়। পিসিপি’র মধ্যকার স্বায়ত্তশাসন বিরোধি চক্রটি এতে উৎখাত হয়ে যায় ।
১৩ অক্টোবর ১৯৯২
দিঘীনালা থানা সদরে আহুত পিসিপি’র ছাত্র-গণ সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে ৭০ বছরের বয়োবৃদ্ধ ভরত দাসমুণি সেনা মদদে সৃষ্ট তথাকথিত একক বাংলা ত্রিপুরা পরিষদ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হন। সমাবেশে তৎকালীন পিসিপি’র সভাপতি প্রসিত খীসা, সাধারণ সম্পাদক করুণাময় চাকমা সাংগঠনিক সম্পাদক কেএসমসহ অনেকে ছিলেন।
১৪ অক্টোবর ১৯৯২
দিঘীনালায় পিসিপি’র সমাবেশে হামলা ও ভরত দাসমুণিকে খুন করার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল কলেজের কাইতলা হতে বাস টার্মিনাল, এবং খবংপুয্যা, স্বনির্ভর এলাকা, জেলা পরিষদ অফিস,নারাঙহিয়া, ভিআইটি দূরে চেঙ্গী স্কোয়ারে সমাবেশ হরা। সমাবেশে বোধিপ্রিয় চাকমার সভাপতিত্ব বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপ্রতি প্রসিত খীসা, ক্যজরী মারমা, বিজয়া খীসা, ভূবন ত্রিপুরাসহ বেশ ক’জন ছাত্র নেতা। পরে ডিসি অফিসে প্রসিত খীসার নেতৃত্বে একটা প্রতিনিধি দল দিঘীনালা ঘটনা তদন্ত ও বিচার দাবি করে এক স্মারকলিপি দিতে যান।
২৮শে জানুয়ারি ১৯৯৩-
পাহাড়ী ছাত্র পরিষন বাঘাইছড়ি থানা কমিটি ও কলেজ কমিটির উদ্যোগে এক বিশাল ছাত্র গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছয় শতাধিক ছাত্র জনতা এতে অংশ গ্রহণ করেন। মিছিলটি কাচালং কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে থানা সদর মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানানো হয়।
১৭ মার্চ ১৯৯৩
সঞ্চয় চাকমাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে পিসিপি ঢাকায় এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। মিছিলটি টিএসসি সড়ক দ্বীপ থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রসীত বি. সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এতে বক্তব্য রাখেন।
২০শে মার্চ ১৯৯৩
বান্দরবানে শিশু একাডেমি চত্ত্বরে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়ন সকল চাকমার মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশের আয়োজন করে। পরে একটি মিছিলও বের করা হয়।
৩ মার্চ ১৯৯৩
পাহাড়ী গণ পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখা তথাকথিত গুচ্ছগ্রাম, বড়গ্রাম ও শান্তিগ্রাম ভেঙে দেয়ার দাবিতে মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি ও দিঘীনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কর্মীবৃন্দ এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০শে মে ১৯৯৩
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয় ঢাকার টিএসসি সড়ক দ্বীপে। জাহানারা ইমাম অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বিকেলে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসার সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন বদরুদ্দীন উমর, হায়দার আকবর খান রনো, এ কুদ্দুস প্রমুখ। এরপর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
৩০ জুন ১৯৯৩
ভূমি জরিপ শুরু করার প্রতিবাদে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বান্দরবান শাখা এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। এতে শত শত ছাত্র জনতা অংশ নেয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বান্দরবানের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিশু একাডেমী প্রাঙ্গনে সমবেত হয়।
১৭ জুলাই ১৯৯৩
বাঘাইছড়ি থানা শাখা থানা মাঠে এক বিশাল ছাত্র গণ সমাবেশের আয়োজন করে। বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি ভূবন জ্যোতি চাকমা সভাপতিত্ব করেন?
২২ আগষ্ট ১৯৯৩
তৎকালীন ছাত্র নেতা প্রীতি কুমার চাকমা ও জননেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমার মুক্তি দাবি, বান্দরবানে ১২টি প্রাইমারী স্কুল বিলুপ্তি ঘোষণা ও গুইমারায় আনসার সদস্য কর্তৃক সুমিতা চাকমাকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের তৎকালীন সভাপতি প্রসিত দীসা এতে সভাপতিত্ব করেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে সমাবেশটি আয়োজন করা হয়।
২৫ আগস্ট ১৯৯৩
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রসিত খীসার নেতৃত্বে পাহাড়ী ছাত্র নেতৃবৃন্দ জাতীয় সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সভাকক্ষে জাতীয় সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেন। প্রসিত খীসা বিরোধী দলীয় নেত্রীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করে বলেন, স্বৈরাচারী এরশাদ শাহীর পতনের পর নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সরকার অধিষ্ঠিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। জনগণের ওপর এখনো দমন পীড়ন চলছে বলে প্রতি দীসা উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, অস্ত্রের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানে আমি বিশ্বাস করি না। এ সমস্যাকে অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। পাহাড়ী জনগণের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্যকে মেনে নিয়েই তাদেরকে প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাহাড়ী জনগণের সমর্থন ও অবদান রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার এবং অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না। সমতলের লোকদের অপরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসন করার ফলেই কৃত্রিম দ্বন্দ সৃষ্টি হয়।
১৩ অক্টোবর ১৯৯৩
শহীদ ভরতদাস মুণির ১ম মৃত্যুবার্ষিকী দিঘীনালার বড়াদামের মাঠে তৎকালীন সভাপতি প্রসিত খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র ইউনিয়নের আসলাম খান, করুণাময় চাকমা বক্তব্য রাখেন। বহিরাগতদের ষড়যন্ত্রের কারণে থানা সদরে হতে পারেনি।
১৬ অক্টোবর ১৯৯০
পিসিপি বাঘাইছড়ি থানা শাখার উদ্যোগে কাচলং কলেজ মাঠে এক বিশাল ছাত্র-গণসমাবেশ ভুবন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত খীসা। এতে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক করুণাময় চাকমা, জননেতা অজয় খীসাসহ পিসিপি-পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ’এর নেতৃবৃন্দ। সংহতি প্রকাশ করে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান লক্ষীকুমার চাকমাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে এ বিশাল ছাত্র গণসমাবেশে জনতা হাত তুলে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। কাচালং এলাকায় সেই ছাত্র-গণসমাবেশটি ছিলো এযাবতকালে সে এলাকায় আয়োজিত সমাবেশের মধ্যে সবচেয়ে বিশাল ও সাড়া জাগানো।
২৭ অক্টোবর ১৯৯০
নানিয়াচর থানায় পিসিপি’র প্রথম শাখা সম্মেলন থানা সদরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন সভাপতি প্রসিত ধীমা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক করুণাময় চাকমা, সচিব চাকমা, আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবন্দ ৷ ২৮ অক্টোবর ১৯৯৩, নানিয়াচর থানা শাখার সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রাঙ্গামাটি ফিরে যাবার সময় সকালে লঞ্চ ঘাটে সেনা সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত হন। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে বাজারে মিছিল হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুরের মধ্যেই নানিয়াচর স্কুলের কয়েক শত ছাত্র-ছাত্রী বিক্ষোভ মিছিল করে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে। বাজারে কেনাকাটায় আসা সাধারণ লোকজনও এই বিক্ষোভ মিছিলে শরীক হয়। বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে পরিবেষ্টন করে প্রতিবাদ মিছিল করতে করতে বাজার সেনা এ সময় কড়া রৌদ্রে স্কুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ক্যাম্প অতিক্রম করে তাদেরকে নিরাপদে মহালছড়ির সড়কে পৌঁছে দেন। নেতৃবন্দকে ঘিরে বেষ্টনী তৈরী করে। আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রীদের সাহসিকতা ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় স্থাপন করে। উক্ত ঘটনা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বড় আকারে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত করার জন্য পিসিপি নেতৃবৃন্দ। বিজয় কেতন চাকমার বাসায় একত্রিত হন। সেদিনই বিকেলে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের মিছিলে এক সেনা সদস্য বাধা সৃষ্টি করলে তার সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এ ঘটনায় বেশ ক’জন পিসিপি কর্মি গ্রেফতার হন।
২৯ অক্টোবর ১৯৯৩
পিসিপি মাইসছড়ি শাখার উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সুমন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। খাগড়াছড়ি সদরে আটককৃত পিসিপি কর্মিদের মুক্তির দাবীতে আবারো বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্ররা ডিসি অফিস ঘেরাও করে। পরের দিন ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচী ঘোষণা দেয়। রাতে মাইকিং করতে গেলে পুলিশ মাইক জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। সংগঠনের মাইক উদ্ধার না করে থানা ছেড়ে যেতে রাজী না হলে পুলিশ ধর্মজ্যোতি চাকমা ও রিপন চাকমাকে মাইকসহ থানায় আটকে রাখে।
৩০ অক্টোবর ১৯৯৩
ডিসি অফিসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট পালনের লক্ষে খাগড়াছড়ি খেজুড়বাগান মাঠ হতে প্রসিত খীসার ( তার আগের দিন নানিয়াচর-মহালছড়ি হয়ে খাগড়াছড়িতে পৌঁছেন) নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু হলে দাঙ্গা পুলিশ বিনা উস্কানীতে হামলা করে। এতে প্রথম আক্রান্ত হন প্রসিত দীসা। পুলিশের বেপোৱায়া লাঠি চার্জে একজনের হাত ভেঙে যায়। গুরতরভাবে জখম হয় ৩০ জনের অধিক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মি । আহত হয় ২০ জনের মতো স্কুল-কলেজের ছাত্র। তার প্রতিক্রিয়া হয় অগ্নিতে মুতাহুতি দেবার মতো। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে আক্রান্ত বিক্ষুদ্ধ পিসিপি কর্মিরা সংঘবন্ধ হয়ে আবার রাজপথে বেরিয়ে আসে। সাথে যোগ দেয় পাড়ার আশে-পাশের লোকজন। দাঙ্গা পুলিশ আবার লাঠি চার্জ করতে গেলে ছাত্র-জনতার সাথে সংঘর্ষ বাধে। নারাগুরিয়ার রাস্তার মোড় রণাঙ্গনে পরিণত হয়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষ চলে। খাগড়াছড়ি পানছড়ি রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৩৮ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেও পুলিশ বিক্ষুদ্ধ ছাত্র- জনতাকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়নি। পুলিশ ফাঁকা গুলিও ছুঁড়ে। পরে প্রশাসন আধাসামরিক বাহিনী বিডিআর নামায়। পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসন ঘটনাস্থলে হংস ধ্বজ চাকমাকে নিয়ে গেলে তাকে দেখে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে। দালালী চলবে না, চামচাগিরি বন্ধ করো” শ্লোগান দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই প্রথম টিয়ার শেল ব্যবহৃত হয়। খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি হয় উত্তপ্ত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩০ জনের অধিক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মিদের সহায়তা করতে সর্বস্তরের লোকজন এগিয়ে আসে। নিয়মিত পথ্য ও খাবার যোগাতে পান খাইয়া পাড়া মিলনপুর মধুপুরবাসীরা জান-প্রাণ দিয়ে এগিয়ে আসে। পানখাইয়া পাড়াবাসী এ ঘটনায় একতা ও সহায়তার হাত প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করে।
১ নবেম্বর ১৯৯৩
খাগড়াছড়িতে বিরাজমান অশান্ত পরিস্থিতিতে প্রশাসন সর্বদলীয় বাঙালী ঐক্য পরিষদ ( ৩০ অক্টোবর রাতে সৃষ্ট) নামধারী সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সাথে পিসিপিকেও ডিসি অফিসে বৈঠকের আমন্ত্ৰণ জানায়। পিসিপি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সাথে মুখোমুখি বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রশাসনের বৈঠক বয়কট করে
২ নবেম্বর ১৯৯৩
খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজে বিকেল তিনটায় সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের সাথে পিসিপি নেতৃত্বের বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষে ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হাসান মওসুল চৌধুরী( পারে জিওসি বর্তমানে রাষ্ট্রদূত) সদর সেনা জোনের কমান্ডিং অফিসার, ডিসি ইয়ার মোহাম্মদ (স্ট্রোকে মারা যান), এসপি আবুল হাশেম আর এলাকার এমপি কল্পরঞ্জন চাকমা উপস্থিত ছিলেন । পিসিপি’র পক্ষে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত খীসা। সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকেন যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও হংস ধ্বজ চাকমা। বৈঠকে আটককৃত পিসিপি নেতাকর্মিদের নিঃশর্তে মুক্তি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ছাত্রীদের সুচিকিৎসার ব্যাপারে ঐকমত্য হলে পিসিপি, খাগড়াছড়ি সদরে ঘোষিত বৃহত্তর কর্মসূচী প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয় । -রাতেই আটককৃত পিসিপি নেতাকর্মিদের প্রশাসন বিনাশর্তে মুক্তি দেয়। যে স্থানে দাঙ্গা পুলিশ হামলা চালায় সেই নারাঙহিয়ার রাস্তার মোড়ে কারামুক্তদের সম্বোর্ধনা দেয়া হয়। তার পর পরই ৩০ অক্টোবরে ছাক্র জনতার বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের স্মরণে ঐ জায়গার নতুন নামকরণ হয় ‘রেড স্কোয়ার”।
১৭ নবেম্বর ১৯৯৩
নানিয়াচরে লঞ্চ ঘাটের যাত্রী ছাউনি হতে সেনা চেকপোষ্ট সরিয়ে নেবার দাবিতে পিসিপি নানিয়াচর থানা শাখার আহ্বানে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে ৪০ ইবি রেজিমেন্ট পরিকল্পিতভাবে মিছিলে এ বাজারে আসা লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে ৩০ জনের অধিক নির্বাহ লোককে খুন করে। বহিরাগত সেটলারদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। বাড়ী ঘর পুড়িয়ে দেয়।
২০ নভেম্বর ১৯৯
রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রথমবারের মত নানিয়াচর গণহত্যার প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করা হয়। সমাবেশ শেষে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
২রা ডিসেম্বর ১৯৯৩
রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়াচরে ১৭ নভেম্বর সংঘটিত লোমহর্ষক গণহত্যার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা ও সংগঠনের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পিসিপি’র তৎকালীন সভাপতি প্রসিত বি. খীসা লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নানিয়াচর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেন । ঐদিন নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়: ৭ই ডিসেম্বর শোক দিবস পালন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি পেশ। ৯ই ডিসেম্বর প্রতীক অনশন ও ১৩ই ডিসেম্ব গণঅন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নানিয়াচর অভিমুখে পদযাত্রা।
৪ ডিসেম্বর ১৯৯৩
বান্দরবানে রুমা পাহাড়ী আবাসিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম, ছাত্রী ধর্ষণ ও ছাত্রদের সাথে শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদে রুমা থানার পাহাড়ী ছাত্র ছাত্রীরা এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলে বিপুল সংখ্যক পাহাড়ী ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। তারা বিভিন্ন শ্লোগান দেয় এবং এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ প্রদক্ষিণ করে।
৭ই ডিসেম্বর ১৯৯৩
১৭ নভেম্বর নানিয়াচরে সংঘটিত গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় শোক সমাবেশ ও মৌন মিছিলের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ” তৎকালীন সভাপতি প্রতিস বি. বীসা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূবন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আসলাম খান ও ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া। পরে প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য ছাত্রছাত্রীরা মিছিল সহকারে যায়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পুলিশ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধি দলকে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
৯ ডিসেম্বর ১৯৯৩
১৭ নভেম্বর নানিয়াচর ৪০ ইবি রেজিমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও সেনা জোয়ানসহ তাদের মদদপুষ্ট ববহিরাগতদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার তদন্ত ও বিচারের দাবিকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতীক অনশন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইেমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এর আয়োজন করে।