পিসিপি’র রজত জয়ন্তি উপলক্ষে প্রচারিত লিফলেট

July 20, 2025

By: pcpchtor

দালালি-লেজুড়বৃত্তি দাসত্বের পথ, সংগ্রামই মুক্তির পথ

পিসিপি’র চেতনা সমুন্নত রাখুন, আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল পথে এগিয়ে চলুন!

 

সংগ্রামী বন্ধুগণ,

১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে লংগুদু গণহত্যার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তেজোদীপ্ত ছাত্র সমাজ। সকল ধরনের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ও হুমকি মোকাবিলা করে গঠিত হয়েছিল আমাদের প্রিয় সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সেনা শাসকের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে আগামী ২০মে পিসিপি প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এ ২৫ বছর শুধু পিসিপি’র জন্য নয়, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনে এ এটি গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক সম্ভাবনাময় সংগ্রামী সহযোদ্ধাকে আমরা হারিয়েছি। জেল, জুলুম, মামলা-হুলিয়া মাথায় কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে বহু সহযোদ্ধাকে। শত্রুর হাতে আক্রান্ত হয়ে অনেককে বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব। তাদের কঠিন সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে সংগ্রামের ইতিহাসে রচিত রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৯৪ সালে খাগড়াছড়িতে এবং ১৯৯৫ সালে বান্দরবানে সরকারের অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সাহসিকতার নজির স্থাপিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানাচ্ছি।

 

প্রতিবাদী জনতা,

রাজনৈতিক ভুলের কারণে সন্তু লারমার জেএসএস যখন আন্দোলনে বিপর্যস্ত, তার কর্মীবাহিনী রণক্লান্ত; সেনা ও দালালদের দৌরাত্ম্যে সংগঠন জনগণ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে কোণঠাসা অবস্থায়, তখনই আশির দশকের শেষের দিকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উত্থান ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ এবং সচেতন জনতা তখন প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের ভাষা ফিরে পায়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আবির্ভাবের কারণে জেএসএস এবং পাহাড়ি জনগণ আবার আশায় বুক বাঁধে, সংগ্রামী চেতনায় জাগরিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র ও জনগণের উত্তাল আন্দোলনের মুখে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে জেএসএস’কে বৈঠকে আহ্বান জানাতে বাধ্য হয়। ১৯৯৭ সালে জেএসএস যখন আপোষ চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের বিকিয়ে দেয়, তখন পিসিপি বসে থাকতে পারেনি। ১০ মার্চ ১৯৯৭ সালে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ডাক দিয়ে এই সংগঠনের আপোষহীন লড়াকু সহযোদ্ধারা আন্দোলনের পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে এবং পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হয়ে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠনে ভূমিকা রাখে।

পিসিপি’র রজত জয়ন্তি উপলক্ষে প্রচারিত লিফলেট
পিসিপি’র রজত জয়ন্তি উপলক্ষে প্রচারিত লিফলেট

 

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি নামা নিয়ে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে চলেছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণার পর থেকে পাহড়ি ছাত্র পরিষদ জাতিসত্তাসমূহের অন্য ৫টি ছাত্র সংগঠনকে (মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম, সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, বাংলাদের গারো ছাত্র সংগঠন, ওঁরাও ছাত্র সংগঠন) নিয়ে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারসহ ৫দফা দাবির সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। ২০০৩ সালে তৎকালীন সরকার প্রধান খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পিসিপি’র দাবি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়া হলেও, এখানো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয় নি। ছাত্র ধর্মঘটের কারণে তিন পার্বত্য জেলায় স্কুল কলেজ বাস্তবত অচল হয়ে পড়লে ২০১০ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পাহাড়ি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার ঘোষণা দেন। এই বছর মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, গারো, সান্তাল ও মনিপুরী ভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার কথা থাকলেও তার বাস্তাবায়ন শুরু হয় নি।

 

সচেতন ছাত্র ও জনতা,

দুনিয়ার সকল শাসকগোষ্ঠীই আন্দোলনের শক্তিকে ভয় পায়। ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চক্রান্ত যুগে যুগে পরিচালিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদও ধূর্ত শাসকগোষ্ঠীর চক্রান্তের থাবার শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীল নক্সা বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আপোষহীন সংগ্রামী ধারার বিপরীতে পাল্টা সংস্থা দাঁড় করার ঘৃণ্য উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৫ সালে বিএনপি’র আমলে যোগাযোগ মন্ত্রী কর্ণেল (অব:) অলি আহম্মদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছিল কুখ্যাত মুখোশবাহিনী, যার গালভরা নাম ছিল তথাকথিত ‘পিপিএসপিসি’ (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ি গণপরিষদ সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি)। ছাত্র সমাজের প্রবল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে বিএনপি সরকার সন্ত্রাসী ঠ্যাঙারে সংগঠন মুখোশবাহিনী গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। সে সময় সেনা গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন অমর বিকাশ চাকমা।

পিসিপি’র রজত জয়ন্তি উপলক্ষে প্রচারিত পোস্টার

ধূর্ত শাসকচক্রের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। মুখোশবাহিনী মাঠে নামিয়ে ব্যর্থ হলেও তারা থেমে থাকে নি। পিসিপি’র মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ধান্দাবাজ, সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানীদের ফুসলিয়ে বাগিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হয়। এসআই চাকরি, কাঠ ব্যবসা, ঠিকাদারি– নানা প্রলোভনের টোপ ফেলা হয়। তার পরিণতিতে পিসিপি’তে আবার পুরানো বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আপোষের পথে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের কানাগলির পথ ধরে অগ্রসর হয় ছাত্র নামধারী চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী। ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে এক অমোচনীয় কলঙ্কের কালিমা লিপ্ত হয়। এ দিন চট্টগ্রামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীটি সংগঠনের পাল্টা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী করে। সরকার শাসকগোষ্ঠী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন আন্দোলন পরিত্যাগকারী চক্রটি তাই প্রতীক্ষায় ছিল। পর দিন পত্রিকার পাতা ভরে যায়, ফলাও করে প্রকাশিত হয়। অবশ্য তার আগে থেকেই ঐ গোষ্ঠীটি মূলধারার বিরোধিতা করে পাল্টা কমিটি গঠন করেছিল, যা সরকারি পত্রিকা দৈনিক জনকণ্ঠে (২১ জুন ১৯৯৭) গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছিল। জনকণ্ঠের (২১ জুন ১৯৯৭) সংবাদ প্রতিবেদনে পিসিপি’র মূলধারাকে ‘উগ্রপন্থী’ আর বিচ্যুতঅংশকে ‘সরকারপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার হীন কূটকৌশল প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে।

 

এটা সবার নিকট দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, মুখে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে লোকদেখানো আন্দোলনের হুমকি দিলেও আদতে সরকারের সকল নীল নক্সা বাস্তবায়নে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস আজ কাজ করে চলেছে। বিগত কয়েক বছরের সন্তু লারমার তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করলে আসল সত্য বুঝতে কারোরই বাকী থাকার কথা নয়। ২০১১ সালে আওয়ামী মহজোট সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের জাতিসত্তার স্বীকৃতি না দিয়ে উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছিলো, তখন বড় কোন কর্মসূচী দেয় নি জেএসএস। লোকদেখানোর নামমাত্র বিবৃতি দিয়ে কাজ সেরেছিল।

 

২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলায় সরকারের বিরুদ্ধে কোন কর্মসূচী ছিল না। বরং সেনাবাহিনীর শান্তি সম্প্রীতির র‌্যালীতে সন্তু লারমার প্রতিনিধি ও লোকজন অংশগ্রহণ করেছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সম্মুখে সেনাবাহিনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন ও চুক্তি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী ভূমিকা রাখছে বলে সন্তু লারমা সেনাবাহিনীকে সার্টিফিকেট দেন। ২০১৩ সালে তাইন্দং-এ কামাল হোসেনকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে দুর্বৃত্তরা পাহাড়ি গ্রামে হামলা করলে ইউপিডিএফ দায়ি বলে রাঙ্গামাটিতে সন্তু লারমার মদদপুষ্ট সংগঠন ও ব্যক্তিগণ তথাকথিত মানবন্ধন করেছিলেন।

 

৫ জানুয়ারি এক তরফা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতন, অপহরণ, খুন, গুম বেড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের মাত্রা আতঙ্কজনক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। বান্দরবানে রুমা সেনা গ্যারিসন সম্প্রসারণের নামে সেঙ্গুম মৌজায় ৯৯৭ একর, বিজিবি ব্যাটালিয়নের নামে পাইন্দু মৌজায় ২৫ একর, রোয়াংছড়ি তারাছা মৌজায় রামজাদির নিজস্ব জায়গায় ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। বান্দরবানে নাক্ষাইছড়িতে পরিকল্পিতভাবে ভূমি দস্যুরা চাক্, মারমা, মুরুং জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার সকল ধরনের বাহিনী ও সংস্থা মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও ‘পাহাড়ি ব্যাটালিয়ন’ নামে আলাদা র‌্যাব ইউনিট গঠনের ঘোষণা পার্বত্যবাসীসহ সারা দেশের জনগণকে হতবাক করেছে। অতিসাম্প্রতিক নারায়নগঞ্জে ৭ ব্যক্তি অপহরণ ও খুনের ঘটনায় তথাকথিত এলিট ফোর্স র‌্যাব আরও বেশী বিতর্কিত ও ঘৃণিত হয়েছে। বর্তমানে র‌্যাব হচ্ছে ঘৃণিত ও মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। পার্বত্য চট্টগ্রামে র‌্যাব মোতায়েনের অর্থ হচ্ছে পাহাড়ি জনগণের সাথে শত্রুতা করার সামিল। সরকার পাহাড়ি জনগণকে শত্রু জ্ঞান করছে, তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামে র‌্যাব মোতায়েন হলে সমতলের মত ক্রস ফায়ার-এনকাউন্টার, বিনা বিচারে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যাংক লুটপাট ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটবে। এই ক্ষেত্রে পাহাড়ি বাঙ্গালি কেউই রেহাই পাবে না। পাহাড়ি জনগণের এ কঠিন দুঃসময়ে নির্বাচিত সাংসদ, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেএসএস (সন্তু) এবং তার মদদপুষ্ট ছাত্র নামধারী চক্র ও একশ্রেণীর মৌসুমী সমাজ দরদীদের নির্লজ্জ মৌনতা প্রতিবাদী ছাত্র সমাজকে ক্ষুব্ধ না করে পারে না। র‌্যাব ইউনিট তথাকথিত ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বাতিলে দাবিতে সবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি ও আবশ্যকীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

সংগ্রামী জনতা,

পিসিপি প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ২৫ বছর রজত জয়ন্তীতে আজ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ “দালালি-লেজুরবৃত্তি দাসত্বের পথ, সংগ্রামই মুক্তির পথ” এই ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মনির্ভরশীল ও আপোষহীন ধারার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।

২০০৯-১০ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক, বড়ইতলি (রামগড়), ২০১১ সালে শনখোলা পাড়ার জনগণ নিজ বাস্তুভিটা রক্ষার জন্য আত্মনির্ভরশীল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে রয়েছে, তেমনি পাবর্ত্য চট্টগ্রামের জনগণকে সংগ্রাম করতে হবে নিজ বাস্তুভিটা রক্ষার জন্য।

 

 

সংগ্রামী সহযোদ্ধাবৃন্দ,

সারা দেশে পাহাড় ও সমতলে সরকার মিছিল-মিটিঙের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে চলেছে। এক তরফা নির্বাচনের ফলে সরকার নৈতিকভাবে দুর্বল। সে কারণে সামান্য কোন বিরুদ্ধ মতামত পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না। ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের সম্মুখে বিশিষ্ট নাগরিকদের মানব বন্ধন কর্মসূচীতে হস্তক্ষেপ করে ভ-ুল করে দেয়া সরকারের দুর্বলতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ক্ষমতাসীন সরকারের অব্যাহত ফ্যাসিবাদী আচরণ, দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থাৎ বান্দরবানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত ও জাতীয় পার্টির যৌথ ভূমি দস্যুতা সত্ত্বেও এখানে কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে উঠছে না। এর পেছনে রয়েছে স্বার্থান্বেষী চক্রের পারষ্পরিক বোঝাপড়া ও আঁতাত। আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বসে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস-এর পক্ষে বড় ধরনের কোন আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নিজেদের গদি, স্বার্থ রক্ষার্থে তারা এ অঞ্চলে ভূমি বেদখল বা নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনে নামতে চায় না। কোন আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে দেখলে সন্তুচক্র সরকার-প্রশাসনের সাথে হাত মিলিয়ে তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বান্দরবানবাসী এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী। আগামীতে নির্যাতিত জনগণ আর মুখে বুঁজে নিপীড়ন সহ্য করতে প্রস্তুত নয়।

 

পিসিপি’র ২৫ বছর পূর্তিতে আহ্বানঃ

* দালালি-লেজুড়বৃত্তি ও সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

* পিসিপি’র লড়াই সংগ্রামের চেতনা সমুন্নত রাখুন

* পার্বত্য চট্টগ্রামে র‌্যাবের তথাকথিত ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সংগঠিত হোন, আন্দোলন গড়ে তুলুন

* পাহাড়ের প্রথাগত ভূমি অধিকার স্বীকৃতির দাবিতে সংগ্রাম করুন

* গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করুন

* পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটলার ও নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-যুব সমাজ গর্জে উঠুন, লড়াই করুন

* পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন, বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন

 

২০ মে ঢাকায় পিসিপি’র রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিন, সফল করুন

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)

কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রচারিত ও প্রকাশিত ৯ মে ২০১৪, ঢাকা-১০০০।