স্বাধীকার আন্দোলনে শহীদ
বড়দাস মণির আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা যোগাক
আজ শহীদ বড়দাস মণির মৃত্যুর এক বছর অতিক্রান্ত হল। ১৯৯২ সালের এই দিনে কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দুষ্কৃতিকারীরা তাকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আহত হন অর্ধ শতাধিক ছাত্র-জনতা। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দীঘিনালা থানা শাখা কর্তৃক আয়োজিত শান্তিপূর্ণ ছাত্র-গণসমাবেশে অধীর আগ্রহ নিয়ে পাঁচ হাজারেরও অধিক ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করার জন্য আসার সময় স্বার্থান্বেষী মহলের অঙ্গুলি নির্দেশে এক দল দুষ্কৃতিকারী তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনার জন্য সেদিন হাজার হাজার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা জীবনের মায়া তুচ্ছ করে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। কিন্তু কায়েমী স্বার্থবাদী মহল জনগণের এই জোয়ার দেখে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়ার জন্য “সর্বদলীয় শান্তি পরিষদ” নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের মাধ্যমে ১৯৯২ সালের ১৩ই অক্টোবর দীঘিনালায় তথাকথিত হরতাল ডাকে। উদ্দেশ্য হল পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উত্থানকে রোধ করা।
কিন্তু শহীদ বড়দাস মণি নিজের জীবনের বিনিময়ে চক্রান্তকারীদের মুখোশ সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত করে দেন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দীর্ঘ দিনের বিরাজিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকামী বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়, তখন সেনা প্রশাসন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নিজেদের কুকর্ম ঢাকার জন্য তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের মাধ্যমে পাহাড়ী জনগণের কণ্ঠ রোধ করার প্রচেষ্টা চালায়। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ যখন পাহাড়ী জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রামের সুচনা করে তখন কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী উঠেপড়ে লেগে যায়। অস্তিত্ববিহীন রং বেরংয়ের ভূঁইফোড় সংগঠনের মাধ্যমে উস্কানী দেয়ার প্রয়াস পায়। এ ধরনের মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনা রোধ করার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনের উপরও বর্তায়। দীর্ঘ ১৭ বছরের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় হাজার হাজার নিরীহ পাহাড়ী নর-নারী প্রাণ হারাতে বাধ্য হন, লাখ লাখ নর নারী নিজেদের বসতভিটা থেকে বিতাড়িত হন। এখনও ভারতের মাটিতে ৫০ হাজারের অধিক পাহাড়ী শরণার্থী মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়াও স্বদেশের মাটিতে যারা শরণার্থীর মত জীবন যাপন করছেন তারাও নিজেদের বসতভিটা পর্যন্ত ফেরত পাননি। আমরা এসবের দ্রুত সমাধান কামনা করি।
১৩ই অক্টোবর ৯২ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের ইতিহাসে ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের আন্দোলনে প্রথম শহীদ বড়দাস মণির রক্তে রঞ্জিত হয় দীঘিনালার মাটি। তাঁর রক্তে ভেজা মাটিকে সাক্ষী রেখে সেদিন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ শপথ নিয়েছিল সকল ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এদিনকে প্রতি বছর শোক দিবস হিসেবে পালন করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যতদিন পাহাড়ী জনগণ বেঁচে থাকবে ততদিন শহীদ বড়দাস মণি আন্দোলনে শক্তি, সাহস ও প্রেরণা যোগাবে।
তারিখ: ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৩ ইং
কেন্দ্রীয় কমিটি
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ