শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বরবারে-
স্মারকলিপি
প্রতি,
মাননীয়
শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিষয়: পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে ৫ দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি।
জনাব, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণের দাবী পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চলে ভিন্ন ভাষা ভাষী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব মাতৃভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতি, রয়েছে নিজস্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের এই স্বাতন্ত্র্যকে বাংলাদেশের কোন সরকারই সঠিকভাবে নজর দেয়নি। বরং বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে পার্বত্য পাহাড়ি জনগণের সংস্কৃতিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত বিশেষত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের বক্তব্যে অস্পষ্টতা রেখে, অতিরঞ্জিত বক্তব্য ছাপিয়ে এবং ছবিতে বাঙালি আধিপত্যের বিষয়টিকে সামনে এনে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহকে হেয় করা হয়েছে, জাতিসমূহকে আদিম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শত শত বছরের ঐতিহ্যিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতিসমূহকে বলা হয়েছে বহিরাগত। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস জানতে চাই। বাংলাদেশে বাংলা ভাষী ছাড়াও ভিন্ন ভাষাভাষী বিভিন্ন জাতিসত্তার বাস, তাদের নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নেয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের জনগণও জানে না বাংলাদেশ বহুজাতিসত্তার দেশ। তাই জাতীয় শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তকে জাতিসত্তাসমূহের পরিচিতি তুলে ধরা হলে বাংলাদেশের জনগণ এ সম্পর্কে সচেতন হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের বিকাশের সুযোগ না দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশের দ্বার রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় হচ্ছে না এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে ততদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের কোটা সুবিধা পাওয়ার ন্যায্য অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান জনপ্রতিনিধি কর্মকর্তা হিসেবে আমরা আপনার কাছে আমাদের ৫ দফা দাবীনামা পেশ করছি। আমরা মনে করি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের নিম্নোক্ত ৫ দফা দাবীনামার প্রতি অবিলম্বে নজর দেয়া জরুরী।
আমাদের ৫ দফা দাবীনামা সমূহ নিম্নরূপ:
১। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২ । জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর যে কোন বক্তব্য পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে।
৩। পাহাড়ি জাতিসত্তার সঠিক ও সংগ্রামী রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বলিত পুস্তক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪। বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক পুস্তক বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫। পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি কোটা চালু করতে হবে।
নিবেদক
১। মিঠুন চাকমা-সাধারণ সম্পাদক, পিসিপি, সিসি
২। রূপন চাকমা-অর্থ সম্পাদক, পিসিপি, সিসি
৩। রুইসাঅং মারমা- সহ-সভাপতি, ঢাকা শাখা, পিসিপি,।
৪। নূসেন বম প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা শাখা, পিসিপি।
৫। অনুতোষ চাকমা- দপ্তর সম্পাদক, ঢাকা শাখা, পিসিপি।