অব্যাহত ভূমি বেদখল-হামলা-জাতিসত্তা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান শাসক চক্রের আন্দোলন ঠেকানোর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না পিসিপি’র পতাকাতলে সমবেত হোন আসুন।

August 24, 2025

By: pcpchtor

পিসিপি’র ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ডাক

অব্যাহত ভূমি বেদখল-হামলা-জাতিসত্তা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান শাসক চক্রের আন্দোলন ঠেকানোর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না পিসিপি’র পতাকাতলে সমবেত হোন আসুন। পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান করি

 

সংগ্রামী সহযোদ্ধারা,

পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আপোষহীন ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) প্রতিষ্ঠার আজ উনিশ বছর পূর্ণ হল। প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ১৯ বছর পূর্তিতে সংগঠনের সকল সহযোদ্ধা, শুভানুধ্যায়ী ও ছাত্র সমাজকে কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে জানাই তেজোদীপ্ত সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।

 

এ বিশেষ দিনে আমরা গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মাহুতি দেয়া সকল শহীদদের। আমরা স্মরণ করছি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ৭০ বছরের বয়োবৃদ্ধ ভরতদাস মনি চাকমাকে। স্মরণ করছি অমর বিকাশ, ক্যজাই মারমা, সমর-সুকেশ-রূপন-মনোতোষ, মংশে মারমাসহ সকল সহযোদ্ধাদের; যাদের নিষ্ঠা, অক্লান্ত পরিশ্রম, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের ফলে সংগঠন বিকশিত হয়েছে।

 

সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুরা,

আমরা এমন সময় পিসিপি’র ১৯তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী পালন করছি যখন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ গোটা দেশে জরুরী অবস্থা জারি রয়েছে এবং জনগণের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই জরুরী অবস্থার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখলের মহোৎসব চলছে। পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বহিরাগত বাঙালিদের বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গ্রেফতার, নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর্মীয় পরিহানির মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ।

 

গত ১৫ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে শর্ত সাপেক্ষে সারাদেশ থেকে ঘরোয়া রাজনীতি খুলে দেয়ার ঘোষণা দিলেও জরুরী অবস্থা তুলে নেয়ার ব্যাপারে কিছুই বলেননি। তার বক্তব্যে এটাই সুস্পষ্ট যে সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যেনতেন একটা নির্বাচন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যে নির্বাচন জনগণের জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। কাজেই এ বিষয়ে সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

দেশে চাল ডাল ও তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম সাধারণ জনগণের ক্রয় সীমার বাইরে। বলতে গেলে দেশে এক ধরনের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজন হর হামেশাই বলে চলেছেন দেশে কোন খাদ্য সংকট নেই, খাদ্য মজুদ আছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও কম খাওয়ার কথা বলে জনগণের সাথে এক ধরনের রসিকতা করা হচ্ছে।

 

সংগ্রামী ছাত্র জনতা,

“পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষ নয়, মাটি চাই” এহেন ভয়াবহ সরকারী নীতি কার্যকর থাকার কারণে পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এ যাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে ডজনের অধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির পরও নিপীড়ন-নির্যাতন বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রামগড়ে মারমা গ্রামে হামলা চালিয়ে সেটলাররা শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ও লুটপাট চালায়। ২০০৩ সালে ২৬ আগষ্ট মহালছড়িতে সেনা-সেটলার সম্মিলিতভাবে হামলা চালিয়ে এক প্রাক্তনইউপি চেয়ারম্যান ও এক শিশুকে খুন এবং ৪ শতাধিক বাড়ী পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এ সময় ব্যাপক লুটপাট এবং কোটি টাকার সহায় সম্বল নষ্ট করে দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গত ২০ এপ্রিল’০৮ রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানার সাজেক ইউনিয়নের ৪টি পাহাড়ি গ্রামে সেনা-সেটলাররা হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের ৭৭টি বসতবাড়ি, ও ২টি ইউনিসেফ স্কুল পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এবং লুটপাট চালায়। ২৬ এপ্রিল ঢাকা থেকে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী সমন্বয়ে একটি দল সাজেক ঘটনা পরিদর্শনে গেলে পথিমধ্যে বাঘাইহাট সেনা জোন তাদের আটকায়। পরিদর্শক দলটিকে আর্মি গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। সেনা প্রহরায় টিমের সদস্যদের কেবল গঙ্গারামমুখ স্থানে দু’একজনের সাথে কথা বলতে দেয়। সেনা সদস্যরা পরিদর্শক দলকে ঘটনাস্থলে মাত্র ১০/১৫ মিনিট অবস্থান করার সুযোগ দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে এভাবে সবক্ষেত্রে সেনা হস্তক্ষেপ, নিয়ন্ত্রণ ও খবরদারি জারি রয়েছে। এক কথায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পুরাদস্তুর চলছে সেনা শাসন। সমতলে র‍্যাব’এর ক্রস ফায়ার সম্পর্কে সবাই অবহিত। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান-গুলি বিনিময়, অস্ত্রসহ আটক- সেনা সদস্যদের দ্বারা মঞ্চস্থ এ সব নাটক সম্পর্কে দেশবাসী অবহিত নয়। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেনা কায়েমী স্বার্থবাদী চক্র নানান হীনপন্থার আশ্রয় নিয়ে থাকে। দেশে জরুরী অবস্থা জারি থাকার সুবাদে এখানে গ্রেফতার-নিপীড়ন-নির্যাতন-ভূমি বেদখলের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

সংগ্রামী বন্ধুগণ,

পার্বত্য চট্টগ্রামে এত সব ঘটনার পরও জনসংহতি সমিতির সন্তু চক্র দিব্যি আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বসে আছে। সাম্প্রতিক ২০ এপ্রিল সাজেক ঘটনার পরেও কোন ইতিবাচক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন দূরে থাক, আঞ্চলিক পরিষদের ফান্ড থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে ত্রাণ বিতরণ কিংবা ন্যূনতম প্রতিবাদ হিসেবে বিবৃতি প্রদান এসব কিছুই করে নি। যিনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কথায় কথায় জান কোরবানি দেন, রক্ত দেয়ার অঙ্গীকার করেন এবং পুরানো কর্মসূচিতে ফিরে যাবার (অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার) হুমকি দেন, তিনিই কীনা সাজেকে সেনা-সেটলার হামলার শিকার সর্বস্বান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না, তাদের সমর্থনে একটা বিবৃতি দিতে ভয় পান। “গৃহপালিত বিদ্রোহী” “নন্দলাল” আর কাকে বলে!!! আঞ্চলিক পরিষদের কাড়ি কাড়ি টাকা রাত-বিরাতে কল্যানপুর ভবন ও ঢাকা রেস্ট হাউজে আকাম-কুকামে ব্যয় হয়, অথচ সাধারণ নিঃস্ব মানুষের প্রয়োজনে ত্রাণ মেলে না। চরম দুঃসময়ে সাজেকবাসী কোন শান্তনা-আশ্বাস বাণীও পায় না। কিন্তু আড়ালে ভ্রাতৃঘাতি তৎপরতায় লিপ্ত হতে দেয় উস্কানী। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন শেষে রাঙ্গামাটি হয়ে ফেরার পথে দেখা করতে গেলে সাজেক প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে সন্তু লারমা অত্যন্ত ভাঙ্গনমূলক প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্য দেন। ‘সংবাদ সম্মেলন-তম্মেলন প্রতিবাদ করে কিছু হবে না। আগে ইউপিডিএফ ও জেএসএস সংস্কারবাদী অংশকে শেষ করতে হবে’। অথচ ইউপিডিএফই দুর্গত সাজেকবাসীর জন্য ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, যা আঞ্চলিক পরিষদ করছে না। জাতির এ চরম দুঃসময়েও সন্তু লারমা এখনও পর্যন্ত ইউপিডিএফ ধ্বংসের কর্মসূচি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন, যা ‘১৭ নং দফা হিসেবে পরিচিত’। শাসকচক্রের “জুম্মো দিয়ে জুম্মো ধ্বংসের” ভয়াবহ নীল নক্সা এভাবে বিশ্বস্ততার সাথে তিনি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সম্ভলারমা আত্মধ্বংসী ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যার ফলে কয়েক শত সম্ভাবনাময় তরুণ এ ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছে। জেএসএস’এর মধ্যকার দেশপ্রেমিক প্রতিবাদী অংশটি সমাজ-জাতি ধ্বংসের সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত ধরতে পেরে সন্তু লারমার খপ্পড় থেকে বেরিয়ে আসে এবং তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আসল প্রতিবন্ধক, এক নম্বর জাতীয় শত্রু ও বেঈমান হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। মুখোশ খুলে পড়ায় পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখতে না পারলেও, জাতীয় বেঈমান সন্তু লারমার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের শেষ নেই।

 

এখন তিনি শহরাঞ্চলের বখাটে ও বেকার যুবকদের দলে টানছেন। এর আগুন পোহাতে হচ্ছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। সাজেক ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বারের মত মানববন্ধন কর্মসূচিত পালিত হয়। কিন্তু তাতে বাধ সাধে সন্তু লারমার মদদপুষ্ট ‘দুই নাম্বারীরা’, সাজেক ঘটনায় তাদের নিজেদের কিছু করার সামর্থ্য-ইচ্ছা কোনটাই নেই। কিন্তু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধন কর্মসূচি যাতে মাঠে মারা যায়, সে ষড়যন্ত্র করতে তাদের এতটুকু বাধে নি। এতে তারা হামলাকারী সেনা-সেটলারদের অপকর্মেরই পরোক্ষ সহায়তাকারী ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজেক ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিলসহ পিসিপি বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়, এ সব বাধাগ্রস্ত করতে সম্ভলারমার মদদপুষ্ট দুই নাম্বারীরা নানান ষড়যন্ত্র করে। এক পর্যায়ে এ দুর্বৃত্তরা পিসিপি’র একনিষ্ট কর্মি বাতায়ন দেওয়ান (মুন্না)’এর ওপর শারীরিক হামলা চালায়, গুরুতর জখম করে। অত্যন্ত দুঃখজনক ও ঘৃণ্য ব্যাপার এই, সাংগঠনিক কাজ শেষে সেদিন বাতায়ন জগন্নাথ হলে দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলেন, তার আগে থেকেই ঘোরাঘুরির কাজে তিনি ছিলেন ক্লান্তশ্রান্ত। খাবার খেয়ে পরবর্তী কাজে যাবার পথেই দুর্বৃত্তরা ভরপেট অবস্থায় মারধর করে। তার ডান হাত ফ্রেকচার করে দেয়। এ ধরনের চরম অমানবিক বর্বরোচিত কাজ কোন সাধারণ মানুষই মেনে নিতে পারে না। ‘ভরপেট অবস্থায় মানুষ কেন, কুকুরকেও মারা নিষেধ’- এটিই চাকমা সমাজের সহস্র বছরের বিধান। যারা সমাজের এ বিধান লংঘন করে তাদের মুখে জাতীয়অস্তিত্ব রক্ষার কথা বলা শোভা পায় না। ‘আদিবাসী’ বা অন্য যে কোন নামেই তারা সমাজের কথা বলুক, এতে শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি হবে, সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে না। পিসিপি মনে করে, এরা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দালাল সন্তু লারমার মাসোহারা প্রাপ্ত ঠ্যাঙারে বাহিনী। এদের পেছনে রয়েছে শাসকচক্র। সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে বর্তমানে এরা সাধারণ ছাত্র সমাজকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ায় এদের পায়ের তলায় এখন মাটি নেই। পিসিপি’র ব্যানার ব্যবহার করার অবস্থা না থাকায়, অপতৎপরতা চালিয়ে যাবার নতুন ফন্দি হিসেবে এরা “আদিবাসী” ব্যানার আঁকড়ে ধরেছে। নামসর্বস্ব একটি ‘আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ নামে জোট গঠনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত, যদিও এর সাথে সাধারণ আদিবাসী ছাত্রদের (আসলে সংখ্যালঘু জাতিসত্তা) কোন সম্পর্ক নেই। মুখে ‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের’ স্বার্থ রক্ষার কথা বললেও, কার্যতঃ এরা সংখ্যালঘু জনগণের ওপর শাসকচক্রের শাসন-শোষণ বজায় রাখার পক্ষেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার অগ্রসর বন্ধুদের আরো সজাগ হতে হবে। ‘আদিবাসী’ নাম ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ঠেকাতে শাসকচক্র যাতে কাউকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।

 

বন্ধুরা,

সাজেকে হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবোধক। সেনা প্রধান মইন উ আহমদ পরিদর্শনে গিয়ে সাজেকের ঘটনা “সন্ত্রাসী’ ও “কুচক্রী” গোষ্ঠীর কাজ এ ধরনের দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য দিয়ে মূল হোতা বাঘাইছড়ি জোনের সেনা কর্মকর্তাদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। জেলা পরিষদের দালালরা ঘটনাস্থলে সেনা প্রধানের সাথে উপস্থিত থেকে ঐ আপত্তিকর বক্তব্যের অংশীদার হয়েছেন, এর জন্য একদিন তাদেরও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

 

সংগ্রামী ছাত্র সমাজ,

সময় পাল্টাচ্ছে! বসে থাকার আর কোন জো নেই। আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিতে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় এখনই।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে যুগ যুগ ধরে পদানত করে রাখার লক্ষ্যে শাসক চক্র বিভিন্ন কলা-কৌশল প্রয়োগ খাটিয়েছে। ধুরন্ধর শাসক চক্র ‘৯৭ সালে জেএসএস’কে দিয়ে ‘পার্বত্য চুক্তির’ মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের পায়ে কুঠারাঘাত করতে সক্ষম হয়। চুক্তিতে ‘উপজাতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ফলে সকল জাতিসত্তাকে অধিপতি জাতির ‘অধস্তনে’ পরিণত করা হয়েছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসত্তার জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক ও আপত্তিকর। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসত্তা নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক নব জাগরণের কর্মসূচি হিসেবে পিসিপি’র মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের দাবিসহ ৫ দফা শিক্ষাসংক্রান্ত দাবিনামার আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র সমাজকে এ আন্দোলনে সামিল হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিও ঐতিহ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। একমাত্র ছাত্র সমাজই এ দায়িত্ব নিতে পারে। আমাদের মনে রাখা দরকার, অতীতের গৌরবময় সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। কিন্তু শাসকচক্র এই ঐতিহ্যমণ্ডিত সংগ্রামী ইতিহাস সম্পর্কে ছাত্র সমাজকে ভুলিয়ে রেখেছে। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তা সমূহের পরিচিতি,। সংগ্রাম ও ঐতিহ্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কখনো “উপজাতি” কখনো “আদিবাসি” হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে জাতিসত্তাসমূহকে হেয় করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবাদী ছাত্র সমাজ তা আর বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নয়।

 

সংগ্রামী বন্ধুরা,

শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত কোটা বাতিল করে পার্বত্য কোটা চালু করা হয়েছে। বিএনপি আমলে তা করা হলেও আওয়ামী লীগ-এর সময় তা বাতিল করা হয় নি। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে তা আরো পাকা পোক্ত করে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পিএসসিতে জাতিসত্তাদের জন্য ৫% সংরক্ষিত কোটা ব্যবস্থার অনিয়ম চলছে এবং তা বাতিলের জন্য নানান ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সকল জাতিসত্তার ছাত্র-ছাত্রীদের সোচ্চার হতে হবে।

 

সংগ্রামী জনতা,

শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ে-সমতলে লড়াই জরুরি বলে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিশ্বাস করে। জরুরী অবস্থা জারি রেখে এবং সন্ত্রাস দমন আইন প্রাথমিকভাবে অনুমোদন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তার জন্য পিসিপি গভীরভাবে শংকিত। দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সেনা নিয়ন্ত্রিত বর্তমান সরকার ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। কানসাট, ফুলবাড়ির মতো মতো সারাদেশের জনগণ আজ বিস্ফোরণম্মুখ হয়ে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিও আজ বিস্ফোরণম্মুখ। যে কোন সময় শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনতা সমুদ্রের মতো ফুঁসে উঠতে পারে।

 

১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাজের কাছে আমাদের আহ্বান

  • শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ফাঁদে পা দেবেন না
  • পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলন বেগবান করতে পিসিপি’র পতাকাতলে সমবেত হোন
  • জাতিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশে পিসিপি’র শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফার সংগ্রামকে এগিয়ে নিন
  • অবমাননাকর অপমানসূচক ‘উপজাতি’ শব্দ বর্জনের আন্দোলনে ভূমিকা রাখুন
  • ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস চেতনার সংগ্রামকে সারা দেশের সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মাঝে ছড়িয়ে দিন
  • জাতিসত্তা সম্পর্কে সকল ধরনের অপমানজনক শব্দ পরিহার করার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখুন
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী সরকারী চর, এনজিও, দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের মুখোশ খুলে দিন
  • পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্পদ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখুন
  • পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের বাস্তব ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে এলাকায় এলাকায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিসিপি’র শাখা প্রতিষ্ঠা করুন

সরকারের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য

  • পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী দিয়ে পাহাড়ি জনগণের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ কর
  • পাহাড়ি উচ্ছেদের লক্ষ্যে জায়গা-জমি দখল প্রক্রিয়া ও সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ কর
  • অস্থিতিশীল কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সেটেলার বাঙ্গালিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধ কর
  • বিভিন্ন গণ মাধ্যমে ও মিডিয়ায় পাহাড়ি জাতিসত্তা সম্পর্কে আপত্তিকর ও অসম্মানজনক বক্তব্য বিবৃতিদান বন্ধ কর
  • জনগণকে বিভক্ত করে এক অংশকে সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভাগ দিয়ে প্রতিবাদী অংশটির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার উপনিবেশিক কূটকৌশল বন্ধ কর
  • সাজেক ঘটনার মূল হোতা বাঘাইছড়ি জোনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সাজিদ মো: ইমতিয়াজকে গ্রেফতার কর এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর
জেএসএস (সন্ত চক্র) ও ২ নাম্বারীদের (সম্ভর ভাড়াটিয়া) উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী
  • সরকারের ক্রীড়নক হয়ে জাতীয় সম্মান ও আত্মমযার্দা বিকিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন
  • সাধারণ ছাত্রদের ভয়, হুমকী ও প্রলোভন দেখিয়ে বিপথে পরিচালিত করবেন না, জনতার আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করবেন না

 

২০ মে ২০০৮

ঢাকা

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ হতে প্রকাশিত ও প্রচারিত। ২০ মে ২০০৮।