Skip to content

পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনামা

    সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা সহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি জানিয়ে ২০০৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) পদযাত্রা সহকারে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এই স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় হতে মো: আব্দুল বারি (পরিচালক, প্রশাসন) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়।  তৎকালীন পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চাকমার বরাবরেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়।

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

    আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রধামন্ত্রীর বরাবরে পিসিপি’র প্রদত্ত স্মারকলিপি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রেরিত চিঠিটি প্রকাশ করা হলো:

    শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরবারে-

    স্মারকলিপি

    বরাবর,

    মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী

    গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

    প্রধানমন্ত্রী কার্য্যালয়

    তেজগাঁও, ঢাকা।

    তারিখ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৩, ঢাকা।

    বিষয়: পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসত্তাসমূহের শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি।

    মহোদয়া,

    বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাদের পক্ষ থেকেই আমরা এই স্মারকলিপি আপনার নিকট পেশ করছি।

    আপনি জানেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহ স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস করে আসছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বৃটিশ শাসনামল থেকে অদ্যাবধি তাদের ওপর একদিকে যেমন রাজনৈতিক দমন পীড়ন চলে আসছে, তেমনি অন্যদিকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে তাদের স্বকীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করে দেয়ার পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। নিজ বসভূমিতেই পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহ এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে চলেছে। সংবিধানে তাদের জাতিসত্তার কোন স্বীকৃতি নেই। সরকারী নথিপত্রে এমনকি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিতেও তাদেরকে “উপজাতি” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা যে কোন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি বা জাতিসত্তার জন্য অত্যন্ত অপমানজনক।

    পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেল জনগণকেই নিজ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ সালাম, বরকত কেবল বাংলা ভাষার জন্য নয়, মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ভাষঅ আন্দোলনে বাংলাদেশের জনগণের এই মহান আত্মত্যাগের স্বীকৃতি প্রদান করে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এর জন্য গর্ব করতে পারেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক ও বহুভাষিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও, বাংলা ছাড়া অন্যান্য ভাষাগুলো অনাদরে, অবহেলায় ও অবজ্ঞায় পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সাংস্কৃতিক সম্পদ ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের এই ভাষাসমূহের সংরক্ষণ, বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য কোন সরকার আজ পর্যন্ত কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারী আনুকূল্য ছাড়া পিছিয়ে পড়া জাতিসত্তাসমূহ ও তাদের ভাষা-সংস্কৃতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে, এবং আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

    আমরা মনে করি, একইক দেশের নাগরিক হিসেবে বাঙালীসহ বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার মধ্যে সমঅধিকার ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া একান্ত অপরিহার্য। দেশের প্রত্যেক জাতিসত্তা যাতে নিজ নিজ ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তথা স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখে অন্য সকল জাতিসত্তার সাথে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে পারে সেজন্য যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা নিম্নোকত দাবি আপনার নিকট পেশ করছি:

    ১। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

    ২। স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকে জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বাদ দিতে হবে।

    ৩। পাহাড়ি জাতিসত্তার বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী ও সঠিক সংগ্রামী ইতিহাস স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

    ৪। বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক রচনা পুস্তক বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

    ৫। পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়িদের বিশেষ কোটা চালু করতে হবে।

    আমরা ইতিপূর্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০০২ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উক্ত দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেছি। তাঁরা উভয়ে উক্ত দাবিসমূহ বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কোন দাবি পূরণ করে সরকারের পকষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এমতাবস্থায় আমরা উক্ত দাবিগুলো পূনরায় আপনার নিকট উপস্থাপন করছি এবং সেগুলো পূরণের লক্ষ্যে অচিরেই আপনার সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

    জেলাস চাকমা

    সভাপতি

    পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ

    কেন্দ্রীয় কমিটি।

    মিঠুন চাকমা

    সাধারণ সম্পাদক

    পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ

    কেন্দ্রীয় কমিটি।

    শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনমা
    শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনমা

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রেরিত চিঠি-

    গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

    পুরাতন সংসদ ভবন

    ঢাকা

    তারিখ- ১৫ ফাল্গুন ১৪০৯, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৩

    পত্র সংখ্যা-৬১.৩৯.১৬.০০.০০.৫.২০০২ (অংশ ৬) -২২

    বিষয় : স্মারকলিপি প্রেরণ প্রসঙ্গে

           উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জনাব মিঠুন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, খাগড়াছড়ি কর্তৃক দাখিলকৃত স্মরকলিপি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে এসঙ্গে পেরণ করা হলো।

     

    ১। সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

    ২। সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

    অনুলিপিঃ

    জনাব মিঠুন চাকমা

    হিল লিটারেচার ফোরাম

    ১২, আজিজ সুপার মার্কেট

    শাহবাগ, ঢাকা-১০০০।

    শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনমা