ক্ষমতাসীন সরকারের অব্যাহত অত্যাচার-উৎপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশানের জরুরী আহ্বানঃ

May 10, 2025

By: pcpchtor

 

ক্ষমতাসীন সরকারের অব্যাহত অত্যাচার-উৎপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশানের জরুরী আহ্বানঃ

বৈসাবি উৎসব ‘৯৪ বর্জন করুন

বছর ঘুরে আবারো জীবনের নতুন বার্তা নিয়ে নবমন্ত্রে উজ্জীবিত করে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মো জনগণের ঐতিহ্যবাহী মহান জাতীয় উৎসব বৈসাবি ‘৯৪ (বৈসু-সাংগ্রাই-বিষ্ণু)।

এই মহান জাতীয় উৎসবের দিন সামনে রেখে আমরা গভীর শোক, দুঃখ ও শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করছি-সেই সব বীর শহীদদের, যারা শৃঙ্খল মুক্তির মহান লক্ষ্যে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেদের আত্মাহুতি দিয়েছেন। যারা বিভীষিকাময় বর্বরতম লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞে সেনা ও বেআইনী অনুপ্রবেশকারীদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন-সেই কলমপতি, ভূষণছড়া, হরিনা, ফেনী, লংগুদু, লোগাং এবং অতি সাম্পতিক নানিয়াচর হত্যাযজ্ঞের বীর শহীদদেরকে। আমরা সকল শোক সন্তপ্ত শহীদ পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সমব্যথী হয়ে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করছি। এবারের বৈসাবি ‘৯৪ এর শপথ হোক-শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। ভাগ্যাহত জুম্মো জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা।

আমরা আরো গভীর মনোবেদনার সাথে স্মরণ করছি- ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রিত ৫৫ হাজার শরণার্থীকে। যারা ‘৮৬ সালের ১লা মে পানছড়ি-দীঘিনালা হত্যাযজ্ঞে বাস্তুভিটা হারিয়ে জীবনের শেষ আশ্রয় ও নিরাপত্তার সন্ধানে সীমান্ত পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো বিদেশের মাটিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বিগত ৮ বছর ধরে তারা বৈসাবি উৎসব থেকে বঞ্চিত। তাদের অনুপস্থিতিতে আমাদের সকল আনন্দ নিষ্প্রাণ, সকল আয়োজন উৎসব অসম্পূর্ণ।

স্মরণ করছি গুচ্ছগ্রামবাসীদের-যারা গুচ্ছগ্রাম নামের বন্দী শিবিরে আবদ্ধ হয়ে দুঃসহ দিনাতিপাত করছেন। আভ্যন্তরীণ শরণার্থীদের-যারা বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত হয়ে নিজ দেশে পরবাসীর মতো যন্ত্রণাময় দিন অতিবাহিত করছেন।

স্মরণ করছি কালায়ন চাকমাসহ কারারুদ্ধ সকল সাথী-সহযোদ্ধাদেরকে-যারা সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে জেলে আটকে রয়েছেন। যাদের বন্দী জীবনে বৈসাবি উৎসবের কোন তাৎপর্য নেই।

এযাবৎ গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে গিয়ে সে সব সাথী-সহযোদ্ধা নিপীড়ন-নির্যাতন লাঞ্ছনা ভোগ করেছেন, মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলার শিকার হয়ে ঘরছাড়া হয়ে বন বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন-তাদের সাথে সহমর্মীতা ও একাত্মতা প্রকাশ করছি।

শত সহস্র দুঃখ বেদনা ও গ্লানি নিয়ে মহান জাতীয় উৎসব বৈসাবি ‘৯৪ উপলক্ষ্যে আমরা স্মরণ করছি-পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অভাগা জুম্মো জনগণকে। যে যেখানেই থাকুন, যেভাবেই থাকুন-আমাদের বুকভরা ভালোবাসা, শুভেচ্ছা এবং সংগ্রামী অভিবাদন গ্রহণ করুন।

পুরাতন বছরের বিদায় ও নতুন বর্ষবরণ-এই তাৎপর্য ঘিরেই ত্রিপুরাদের বৈসু-মারমাদের সাংগ্রাই-চাকমাদের বিঝু উৎসব সংক্ষেপে বৈসাবি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সামাজিক-সাংস্কৃতিক আনন্দমুখর উৎসব এই বৈসাবি অনুষ্ঠান।আগেকার দিনে এই উৎসব আয়োজনের জন্য গ্রামে গ্রামে ধুম পড়ে যেতো। বৈসাবি উৎসবের আগমনে পার্বত্য এলাকার জনপদ নতুন সাজে সেজে উঠতো। শিঙা, বাঁশি ও ডুডুকের বাজনায় মুখর হয়ে উঠতে গিরি কন্দর। মারমাদের ঐতিহ্যবাহী “পানি খেলা” উৎসবে তরুণ যুবা-যুবতীরা নতুন বন্ধু বান্ধবের সাথে পরিচয় হতো, উৎসবের আনন্দে হতো মাতোয়ারা।

ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী “গৈরিয়া নৃত্যের তালে মেতে উঠতো ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও। গ্রাম থেকে গ্রাম ঘুরে বেড়াতো গৈরিয়া নৃত্যের দল।

চাকমাদের গেংখুলী গীতিকাররা পুরানো দিনের সুখ-দুঃখের গান গেয়ে যুবক-যুবতীদের মাতিয়ে তুলতো। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় শোনা যেতো হৃদয় উজার করা “রেইং” (উল্লসধ্বনি)।

শত বছর আগে বৈসাবি মানে এক প্রাণচাঞ্চল্য ভরা উৎসব। হৃদয় আন্দোলিত করা এক উল্লাস মুখর শুভদিন।

তখন না ছিল অভাব, অনটন। না ছিল দুশ্চিন্তা, নিপীড়ন-নির্যাতন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবন ছিল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা নিরাপদ ও নিরুপদ্রপ।

অত্যাচার-উৎপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসলীলা ছিল-অজানা, অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় দুর্বোধ শব্দ। অত্যাচারের ঘটনাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীরা রূপকথার দৈত্য-দানবের কাহিনীর মতোই অদ্ভুত মনে করতো।

কিন্তু আজ? নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস। কোথায় সেই আগেকার দিনের বৈসাবি উৎসবের আনন্দ? মন মাতানো গানের সুর? শিঙা-ডুডুক বাজনা? ত্রিপুরাদের গৈরিয়া নৃত্য? মারমাদের পানি খেলা?

আজ সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে করুণ হাহাকার অবস্থা। লোকের মুখে হাসি নেই। হৃদয় বেদনা ভারাক্রান্ত। জীবনে বিষাদের ছায়া। আর্থিক দৈন্যদশায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অত্যাচারের স্টিম রোলারে পিষ্ট হয়ে হতভাগা জুম্মোদের নাভিঃশ্বাস উঠছে।

জীবনের নিরাপত্তার অনিশ্চয়তায় মানুষ শংকিত। দাঙ্গা-হাঙ্গামার ভয়, ভিটেবাড়ী ছাড়া হবার ভয়, খুন-গুম হবার আশংকা আর নিপীড়ন-নির্যাতনের ভয়ে জনগণ আতঙ্কগ্রস্থ।

এখনো ভারতে আশ্রিত ৫৫ হাজার শরণার্থী দেশে ফিরতে পারেনি। যারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে ফিরেছে, তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। জায়গা-জমি ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।

রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে প্রতিনিয়ত বেআইনী অনুপ্রবেশ ঘটছে। ছলে-বলে-কলা কৌশলে পাহাড়ীদের জমি বেদখল করা হচ্ছে। বান্দরবান থেকে বহু জুম্মো নিজ বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত হয়ে উপায়ন্তর না দেখে বার্মায় পাড়ি জমাচ্ছেন।

নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকারীভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ প্রস্তুতি ও আগ্রাসন চালানোর আভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে। সংখ্যালঘু পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহকে সমূলে বিনাশ করার জন্য সরকার সুগভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। বিভিন্ন মিটিং ও জনসমাবেশে সরকারী কর্মকর্তা ও মন্ত্রীরা সংখ্যালঘু জুম্মোদেরকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়ে চলেছেন। দাঙ্গা বাধিয়ে পাহাড়ীদেরকে দেশছাড়া ও ভিটেছাড়া করার জন্য সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দাঙ্গাবাজ সাম্প্রদায়িক সংগঠন সৃষ্টি করা হয়েছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ী গণ পরিষদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ঐ দাঙ্গাবাজ গুন্ডাদের লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার রাঙ্গামাটির জনবসতি পুড়িয়ে দিয়েছে। নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালিয়ে লোকজন জখম করেছে। দীঘিনালায় ৭০ বছরের বৃদ্ধ বড়দাস মনিকে খুন এবং শতাধিক লোকজনকে গুরুতর আহত করেছে। বান্দরবানের পাহাড়ী অধ্যুষিত জনবসতিতে সুপরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা বাঁধানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে। খাগড়াছড়িতে গেল অক্টোবর-ফেব্রুয়ারীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত করার জন্য বহিরাগত গুন্ডাদের প্রকাশ্য জনসমক্ষে উস্কানী দিয়েছে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না হতেই লোগাং-এ স্মরণাতীত কালের ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। লোগাং এর বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের রক্তের দাগ না শুকাতেই, ১৭ নভেম্বর ‘৯৩ ইং রাঙ্গামাটির নানিয়াচরে আরো এক ভয়াবহ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছে।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনতার কণ্ঠ রুদ্ধ করে ক্ষমতাসীন সরকার একের পর এক গণবিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে। অন্যায়-অনাচার চালিয়ে পার্বত্যবাসীদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে বিএনপি সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজকতা শুরু করে দিয়েছে।

এতকিছু ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরেও ক্ষমতাসীন সরকার নির্লজ্জভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করছে বলে প্রচার চালাচ্ছে। পাহাড়ীরা সরকারের কার্যকলাপে সন্তুষ্ট ও সুখে রয়েছে বলে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করতে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে।

ক্ষমতাসীন সরকারের এ ধরনের ঘৃণ্য গণবিরোধী ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপে পার্বত্য চট্টগ্রামের আপামর জনগণকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকারের সদইচ্ছা ও আন্তরিকতার প্রতি আমরা সন্দিহান। সরকারের কার্যকলাপে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাগ্যাকাশ আবারো দুর্যোগের কালো মেঘে আচ্ছন্ন।

তাই বৈসাবি উৎসবের সাময়িক আনন্দ স্ফুর্তিতে আত্মহারা হবার সময় আমাদের নেই। স্বজনহারা, সাথীহারা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ক্ষণিকের আনন্দ উৎসবে গা ভাসিয়ে দেবার অবকাশ আমাদের নেই।

আমাদের সামনে নানিয়াচরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের লাশ পড়ে আছে। মৃত্যুর গোঙানী আর মরন চিৎকার আজো আমরা শুনতে পাচ্ছি। বেঁচে থাকার করুণ আর্তচিৎকার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়ে বাতাস ভারি করে তুলেছে।

খুন করেও রক্ত পিপাসু হায়েনাদের এখনো রক্তের সাধ মিটেনি। নানিয়াচরের শতাধিক নিরীহ জনসাধারণের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। মানুষের জীবন বিষিয়ে তোলা হচ্ছে। বেআইনী অনুপ্রবেশকারীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। পাহাড়ী নিধনযজ্ঞ চালানোর সুগভীর পাঁয়তারা চলছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের বৈসাবি উৎসবে সামিল হবার আর মন-মানসিকতা নেই। যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই। অস্তিত্বের কোন গ্যারান্টি নেই। সেখানে ক্ষণিকের উৎসবের আনন্দে বিভোর হবার কোন মানে নেই। পরিস্থতি যেখানে থমথমে-অস্থিতিশীল, জীবন যেখানে অনিশ্চিত, অস্তিত্ব যেখানে সংকটাপন্ন, অত্যাচারীর শাণিত কৃপান যেখানে উদ্যত-সে অবস্থায় ক্ষণিকের আনন্দ স্ফুর্তি ও উৎসবের আয়োজন মানে নিজেদের সাথে আত্মপ্রবঞ্চনা করা। সাময়িক উৎসবে মেতে উঠা মানে নিজেদের মিথ্যে প্রবোধ দেয়া।

তাই পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশান যৌথভাবে এ বছরের বৈসাবি উৎসব ‘৯৪ বয়কট ঘোষণা করছে।

আগামী দিনে বৈসাবিকে সত্যিকার অর্থে মুক্ত পরিবেশে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পালনকরতে পারার দাবিতে,

-অনাগতকালের দিনগুলোকে আরো সুন্দর, উজ্জ্বল, সুখী-সমৃদ্ধ এবং আমাদের অনিশ্চিত

ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করতে; -সর্বোপরি আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও আীধকার প্রতিষ্ঠা:

-এবং সরকারের অব্যাহত দমন-পীড়ন, হত্যাযজ্ঞ ও জুম্মো-উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে-পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন ফেডারেশান বৈসাবি উপলক্ষ্যে-

  • সকল প্রকার খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বর্জন করবে।
  • সকল প্রকার বিনোদনমূলক কর্মসূচী থেকে বিরত থাকবে।
  • উৎসবে আমন্ত্রণ, আপ্যায়ন ও ঘোরাফিরা করা থেকে বিরত থাকবে।

এই পৃথিবীতে কে আনন্দ উৎসব করতে না চায়। কে না চায় প্রাণ খুলে হাসতে, হৃদয় উজার করে উৎসবে মেতে উঠতে। সবাই চায় বছরের প্রতিটি দিনই হোক আনন্দ উৎসবে ভরা। কিন্তু জীবনের কতো গভীর দুঃখ, গ্লানি ও বেদনা থেকে আমরা বৈসাবি’র মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসব বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের অভাগা জুম্মোরা কি দুঃসহ যন্ত্রণায় দিনাতিপাত করছে-বৈসাবি’র মতো উৎসব বয়কট তারই বহিঃপ্রকাশ।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার যথাযথ সমাধানের পদক্ষেপ না নিয়ে, সংখ্যালঘু পাহাড়ীদের সমূলে বিনাশ করার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে-আমাদের প্রতিবাদ তার বিরুদ্ধে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনতার প্রতি আমাদের জোর আহ্বান:

  •  আসুন পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন ফেডারেশনের বৈসাবি উৎসব ‘৯৪ বর্জনের কর্মসূচিতে সামিল হোন।
  •  বৈসাবি উপলক্ষে বাড়তি ও বাহুল্য আয়োজন থেকে বিরত থাকুন।
  •  সকল প্রকার বিনোদনমূলক কর্মসূচী স্থগিত রাখুন।
  •  সরকারের যে সব ভাড়াটে এজেন্ট নকল আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে হতভাগা জুম্মোদের দুঃখ-বেদনার সাথে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে চাইবে কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীরা সুখে-শান্তিতে আছে বলে সরকারী প্রচারণায় সহযোগীতা দেবে-সে সমস্ত সরকারী চরদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
  •  যে কোন ধরনের বিভেদ, আঞ্চলিকতা ও ভাঙ্গন সৃষ্টির সরকারী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
  •  সকল প্রকার অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।
  •  স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সফল করার জন্য ছাত্র-যুব-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
  •  জাগ্রত সংগ্রামী নারী সমাজকে আন্দোলনে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে সর্বাত্মক সহযোগীতা করুন।

আমাদের ন্যায্য সংগ্রামের বিজয় সুনিশ্চিত।

৭ই এপ্রিল, ১৯৯৪

ঢাকা।

পাহাড়ী গণ পরিষদ

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ

হিল উইমেন ফেডারেশান